গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু, ‘সিসিটিভির হার্ডডিস্ক নিয়ে পালালেন স্বামী’

বগুড়ায় রিফাত জাহান রিংকি (১৯) নামে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। নিহতের পরিবার এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করলেও স্থানীয়ভাবে কেউ কেউ আত্মহত্যা বলে প্রচার করছেন। তবে তারা সরাসরি বক্তব্য দিতে রাজি হননি। এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত আত্মহত্যার কোনো সুস্পষ্ট আলামত পাওয়া যায়নি।
তবে এ ঘটনার পর থেকেই নিহতের স্বামী নুরুন্নবী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে আত্মগোপনে থাকায় জনমনে নানা প্রশ্ন ও সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১০টার দিকে সদর উপজেলার নুনগোলা দক্ষিণ পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিংকি শাজাহানপুর উপজেলার নন্দকুল উত্তর পাড়া গ্রামের রাশেদুল ইসলামের মেয়ে। পাঁচ বছর আগে নুনগোলা এলাকার নুরু মিয়ার ছেলে নুরুন্নবীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের চার বছর বয়সী একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর থানার তদন্ত কর্মকর্তা মাহফুজ আলম।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকেলে রিংকিকে বাড়ির উঠানে স্বাভাবিকভাবে ব্যাডমিন্টন খেলতে দেখেন প্রতিবেশীরা। যদিও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মাঝেমধ্যে পারিবারিক কলহের কথা শোনা যেত। তবে রাতের দিকে হঠাৎ তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত স্বামী নুরুন্নবী ও তার পরিবারের কোনো সদস্য বাড়িতে নেই। অভিযোগ রয়েছে, ঘটনার পরপরই তারা বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে পালিয়ে যান।
এ ঘটনায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু রায়হান বলেন, এর আগে তাদের মধ্যে কোনো ঝগড়া-বিবাদের কথা আমি শুনিনি। আজ রাতে হঠাৎ জানতে পারি তিনি মারা গেছেন। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ঘটনার সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করা হোক।
নিহতের বোন আশা খাতুন জানান, বিকেলে রিংকির মোবাইল থেকে তার ফোনে একটি মিসড কল আসে। পরে বারবার কল করলেও রিংকি ফোন রিসিভ করেননি। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলে নুরুন্নবী ফোন করে জানায়, রিংকির ওপর জিনের আসর পড়েছে। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে রিংকির নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন এবং তার গলায় আঘাতের চিহ্ন লক্ষ্য করেন।
নিহতের মামি আয়না খাতুন অভিযোগ করে বলেন, পরিকল্পিতভাবে রিংকিকে হত্যা করে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে আলামত ও সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব করা হয়েছে। আমরা এর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাই।
এ বিষয়ে বগুড়া সদর থানার তদন্ত কর্মকর্তা মাহফুজ আলম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। প্রাথমিক সুরতহালে আত্মহত্যার কোনো সুস্পষ্ট আলামত পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।
এ ঘটনায় থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করা হবে বলে জানিয়েছে নিহতের পরিবার।
আব্দুল মোমিন/এএমকে