লকডাউনোত বউ-ছাওয়া নিইয়া রাস্তাত আছি

রংপুরে ঢিলেঢালা লকডাউনে দিন দিন সড়কে মানুষ বাড়ছে। বেড়েছে যান চলাচলও। যাত্রীবাহী বাস ছাড়া এখন সবই চলাচল করছে। তবে জীবিকার তাগিদে বের হওয়া মানুষেরা পড়েছেন ভোগান্তিতে। চাকরি বাঁচাতে ঢাকার পথে ছুটছেন অনেকেই। কর্মস্থলে ফিরতে এসব মানুষের ভরসা এখন ট্রাক, মাইক্রোবাস ও পিকআপভ্যান।
রংপুর মহানগরসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কে চেকপোস্ট থাকলেও নেই তৎপরতা। মানুষের আনাগোনা কমাতে মাঠে অব্যাহত রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল। তারপরও কমছে না অহেতুক ঘোরাঘুরি ও যানবাহনের চাপ। দিন যতই গড়াচ্ছে ততই মানুষের ঘর ছেড়ে বাইরে বের হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। একই সঙ্গে নগরে ও গ্রামগঞ্জে দোকানপাট খোলা নিয়ে চলছে লুকোচুরি। রংপুরে প্রতিদিন করোনা আক্রান্তের সঙ্গে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হলেও মানুষের মধ্যে বাড়ছে না সচেতনতা।
সোমবার (২৬ জুলাই) রংপুর নগরের শাপলা চত্বর, লালবাগ, মডার্ন মোড়, পায়রা চত্বর, ডিসির মোড়সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ ২০টি পয়েন্ট ছাড়াও জেলা-উপজেলার প্রবেশপথে বসানো হয়েছে পুলিশি চেকপোস্ট। তবে হাতেগোনা কয়েকটি চেকপোস্টে পুলিশ মোটরসাইকেল আরোহীদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করছে। যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে বিধিবহির্ভূতভাবে চলাচলরত ব্যক্তিদের জরিমানা করাসহ মামলা দেওয়া হচ্ছে।
বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন। তারপরও থেমে নেই মানুষের ঘোরাঘুরি। কারণে-অকারণে নানা অজুহাতে বাইরে বের হওয়া বেশির ভাগ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। জীবিকার সন্ধানে বের হওয়া নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষেরা মাস্ক ব্যবহারে বেশি উদাসীন।
নগরের মডার্ন মোড় এলাকায় কথা হয় আবুল মিয়া নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় যেতে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা থেকে রংপুরে এসেছেন। সকাল ৯টা থেকে অপেক্ষা করলেও বেশি ভাড়া চাওয়ায় ট্রাকে উঠতে পারেননি।
আবুল মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বউ-ছাওয়া নিইয়া সকাল থাকি রাস্তাত পড়ি আছি। লকডাউনের জনতে এই সমস্যা। বাস বন্ধ ওই তকনে ট্রাকোত করি তো সবায় ঢাকাত যাওছে। চাকরি না থাকলে বউ-ছাওয়াক নিইয়া খামো কি? যেমন করি হউক, ঢাকাত যাওয়ায় নাগবে।’
মডার্ন মোড় এলাকার তাজহাট থানার পাশে অনেককেই ট্রাকে, কাভার্ডভ্যানে, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে করে ঢাকা, বগুড়া ও গাইবান্ধার পথে রওনা হতে দেখা গেছে। ঢাকামুখী যাত্রী প্রতি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা ভাড়া নিচ্ছেন চালকরা। প্রশাসনের কঠোর তৎপরতার অভাবে ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় ছুটছে চাকরিজীবী ও পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।
সেখানে মোবারক, রাজু মিয়া ও মামুন হুদা নামে তিনজনের সঙ্গে কথা হয়। তারা সবাই গাজীপুর চৌরাস্তায় যাবেন। মাওনার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। ট্রাকে করে ঢাকায় যেতে তারা মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রংপুর এসেছেন।
রাজু মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বাড়িত পড়ি থাকলে সংসার চালাইবে কায়? সরকার তো লকডাউন দিইয়া ঘরোত আছে। কিন্তু হামার তো ঘরোত থাকার মতো আয় রোজগার নাই। চাকরি টিকি থোবার জনতে হামাক ঢাকাত যাওয়ায় নাগবে।’
রংপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে রংপুর নগরে ২ প্লাটুন বিজিবি চারটি ভাগে বিভক্ত হয়ে টহল দিচ্ছে। রংপুরের ৮ উপজেলায় আটটি এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় সেনাবাহিনীর একটি টহল টিম কাজ করছে। এছাড়া জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে মাইকিংসহ টহল অব্যাহত রয়েছে।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতারুজ্জামান প্রধান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মহাসড়কে কোনো গণপরিবহন চলতে দেওয়া হচ্ছে না। জরুরি প্রয়োজনে কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করছে। ট্রাকে করে যাত্রী পরিবহন বন্ধে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া কঠোর বিধিনিষেধ আগামী ৫ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত চলবে। এবারের বিধিনিষেধ গতবারের চেয়ে কঠোর হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর