চাঁদপুরে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল (সদর) হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে অক্সিজেনের জন্য চলছে হাহাকার। করোনা চিকিৎসায় চাঁদপুর জেলায় একমাত্র ভরসার জায়গা এ হাসপাতালে চাহিদানুযায়ী অক্সিজেন পাচ্ছেন না রোগীরা। এ অবস্থায় রোগী ও তাদের স্বজনদের পাশাপাশি হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সরাও দিশেহারা। চাহিদার অর্ধেক অক্সিজেনও সরবরাহ করতে না পেরে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) চাঁদপুর সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের চাপ সামলাতে ব্যস্ত চিকিৎসক ও নার্সরা। রোগীদের চাপ সামলাতে হাসপাতালের তৃতীয় তলায় নতুন করোনা ওয়ার্ড চালু হলেও শয্যা খালি নেই।

ফলে করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে ঠাসঠাসি করে থাকতে হচ্ছে রোগীদের। অনেক রোগীকে ফ্লোরে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে শয্যার চেয়ে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। হাসপাতালের আইসোলেশন শয্যা ৬০ থেকে ১২০টিতে উন্নীত করার পরেও ফ্লোরে রেখেই চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
হাজীগঞ্জ উপজেলার জসিম ঢাকা পোস্টেকে বলেন, ‘অক্সিজেনের জন্য পুরো হাসপাতাল ঘুরেছি। এক রোগী থেকে অন্য রোগীর কাছে গিয়েছি কিন্তু কেউ অক্সিজেন দেয়নি। নার্সদের কাছে গিয়েও কোনো সহযোগিতা পাইনি। শেষ পর্যন্ত অক্সিজেনের অভাবে আমার বাবাকে হারিয়েছি।’

ফরিদগঞ্জ উপজেলার উবায়েদ উল্লাহ বলেন, ‘করোনা ওয়ার্ডে অক্সিজেন সমস্যা নিয়ে কোনো কথা বলা যায় না। এক রোগীর কাছ থেকে আরেক রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া হয়। এখানে কোনো চিকিৎসাই আমরা পাচ্ছি না। রোগীকে ঢাকা নিয়ে যেতে বলছেন হাসপাতালের দায়িত্বরতরা।’
তিনি বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্স চালকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, দুটি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে রোগী ঢাকায় নিতে হবে। তাই ১০ হাজার টাকা খরচ হবে। আমরা গরিব মানুষ, ১০ হাজার টাকা যদি রোগী নিতেই লাগে, তাহলে বাকি টাকা জোগাড় করে চিকিৎসা করাব কীভাবে। পরিবার আর শিশু সন্তানের কান্না সহ্য হয় না।’

চাঁদপুর সদর হাসপাতালের করোনা বিষয়ক ফোকালপার্সন ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল ঢাকা পোস্টেকে বলেন, ‘দেশের অন্যান্য জেলার মধ্যে চাঁদপুরে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তাই অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। আমাদের যা রয়েছে, তা দিয়েই সাধ্যমত চিকিৎসা চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। রোগীদের অক্সিজেনের যে চাহিদা রয়েছে, তা মেটাতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০০ লিটার (দুই লিটারের ২০০টি ও ২৫ লিটারের আটটি) অক্সিজেন প্রয়োজন। সেখানে আমরা আবুল খায়ের গ্রুপ থেকে ১১০ লিটার ও কুমিল্লা থেকে সরকারিভাবে ৬০ লিটার অক্সিজেন পাচ্ছি। দ্রুত আমাদের অক্সিজেন প্লান্টটি শুরু হলে, করোনা ওয়ার্ডে অক্সিজেন সমস্যা নিরসন হবে।’

চাঁদপুর সদর হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হাবিব উল করিম ঢাকা পোস্টেকে বলেন, ‘ঈদের পর থেকে করোনা ওয়ার্ডে রোগী বাড়তে থাকে। সবাই খারাপ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে। প্রতিদিন দেড় শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘যারা ভর্তি হন, তাদের প্রায় সবারই অক্সিজেন প্রয়োজন। আমাদের যে পরিমাণ অক্সিজেন রয়েছে, তা দিয়ে সব রোগীদের অক্সিজেন দিতে সমস্যা হয়ে যায়। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি, যাতে সবাই চাহিদামতো অক্সিজেন পায়। আমাদের লিকুইড অক্সিজেনের কাজ প্রায় শেষ। আশা করছি খুব দ্রুত অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারব।’
ওএফ