ভাস্কর্য ভাঙচুরকারীদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন দুই শিক্ষক

কুষ্টিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেফতার দুই মাদরাসা শিক্ষক আল আমিন (২৭) ও ইউসুফ আলী (২৬) চারদিনের রিমান্ড শেষে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। শনিবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে তারা কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দেলোয়ার হোসেনের আদালতে এ জবানবন্দি দেন।
এর আগে কুষ্টিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্র পাঁচ রাস্তার মোড়ে (শাপলা চত্বর) বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনার মূল অভিযুক্ত মাদরাসার দুই শিক্ষার্থী আবু বক্কর ওরফে মিঠুন (১৯) ও সবুজ ইসলাম ওরফে নাহিদের (২০) পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। একই সঙ্গে গ্রেফতার ওই মাদরাসার দুই শিক্ষক আল আমিন (২৭) ও ইউসুফ আলীর (২৬) চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। দুই শিক্ষককে চারদিনের রিমান্ড শেষে শনিবার বিকেলে আদালতে তোলা হয়। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়ার পর দুই শিক্ষক আল আমিন ও ইউসুফ আলীকে কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
আদালত সূত্র জানায়, দুই মাদরাসা শিক্ষক পুলিশের কড়া পাহারায় আদালতে নেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এরপর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দেলোয়ার হোসেন তার খাস কামরায় প্রথমে ইউসুফ আলীর জবানবন্দি নেন। ঘণ্টাব্যাপী জবানবন্দি শেষে পৃথকভাবে আল আমিনেরও জবানবন্দি নেয়া হয়। বিকেল ৩টার দিকে জবানবন্দি শেষে পুলিশের কড়া পাহারায় প্রিজন ভ্যানে করে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
পুলিশ জানায়, আসামিদের শনাক্তের জন্য পুলিশ মাদরাসায় গেলে ওই দুজন শিক্ষক ছাত্রদের ব্যাপারে তথ্য দিতে অস্বীকার করেন। তারা দুই ছাত্রকে চেনেন না বলে জানান। ছাত্রদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করায় তাদের মামলায় আসামি করা হয়। দুই মাদরাসা শিক্ষক আদালতে স্বীকার করেছেন- তারা দুই ছাত্রকে মাদরাসা থেকে পালিয়ে যেতে বলেছিলেন।
গত শনিবার (৫ ডিসেম্বর) ঘটনার পরদিন সকালে খাবার খাওয়ার সময় ওই দুই ছাত্র শিক্ষকদের জানান, তারা রাতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করে এসেছেন। এমন কথা শোনার পর ওই দুই শিক্ষক তাদের মাদরাসা থেকে পালিয়ে যেতে বলেন। ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা ঘটবে, এমন তথ্য ওই মাদরাসার আরেক শিক্ষক আগে থেকেই জানতেন। ওই শিক্ষককে পুলিশ এখনও খুঁজছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক নিশি কান্ত সরকার জানান, রোববার (১৩ ডিসেম্বর) মাদরাসার দুই ছাত্র আবু বক্কর ওরফে মিঠুন ও সবুজ ইসলাম ওরফে নাহিদের পাঁচদিনের রিমান্ড শেষ হচ্ছে। এ দুই ছাত্রও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে পারেন। পুলিশের তিনজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে আটজন পুলিশ কর্মকর্তা আসামিদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। ভাস্কর্য ভাঙায় সরাসরি অংশ নেয়া দুই ছাত্র ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ৪ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে রাত ২টা ১৬ মিনিটে পাঞ্জাবি-পাজামা পরিহিত দুই মাদরাসা ছাত্র হেঁটে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের কাছে আসেন। এরপর ভাস্কর্যের গা ঘেঁষে থাকা মই বেয়ে ওপরে উঠে পিঠে থাকা ব্যাগ থেকে হাতুড়ি বের করে প্রথমে বঙ্গবন্ধুর হাতের উঁচু তর্জনিতে আঘাত করেন। হাতুড়ি দিয়ে ভাস্কর্যের হাত ও পরে মুখের অংশে ভাঙচুর করেন তারা। প্রায় ৯ মিনিট পর ওই মই দিয়ে নেমে হেঁটে চলে যান তারা। পরে ঘটনাস্থলে থাকা সিসি টিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। ৫ ও ৬ ডিসেম্বর প্রযুক্তির মাধ্যমে পুলিশ অভিযান চালিয়ে কুষ্টিয়ার জুগিয়া এলাকার মাদরাসা ইবনে মাসউদের (রা.) হেফজ বিভাগের দুই ছাত্র এবং তাদের সহযোগিতা করার জন্য দুই শিক্ষককে গ্রেফতার করে।
এর আগে ৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে কুষ্টিয়া পৌরসভার সচিব কামাল উদ্দীন এ ঘটনায় বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন।
৬ ডিসেম্বর এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড.খ মহিদ উদ্দিন। তিনি জানিয়েছিলেন, বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে প্রথমে দুই মাদরাসা ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। ভিডিও দেখে তারা ভাস্কর্য ভাঙা দুইজনকে চিনতে পারেন। পরবর্তীতে ওই দুই ছাত্রকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে মাদরাসার দুই শিক্ষক তাদের পালাতে সহযোগিতা করেছে।
আরএআর