৩ হাজার যাত্রী নিয়ে ঘাট ছাড়ে ভাষাশহীদ বরকত

বেলা ১১টা। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া প্রান্ত থেকে ছেড়ে এসে রো রো ফেরি ভাষাশহীদ বরকত ভেড়ে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে। এ সময় ঘাটের ৫ নং ফেরিঘাটের পন্টুন থেকে বাইপাস পর্যন্ত হাজার হাজার যাত্রী অপেক্ষায় করছিল। ফেরির পাটাতন খুলে দেওয়া হয়। তাতেই স্রোতের মতো ফেরিতে উঠে যায় প্রায় ৩ হাজার যাত্রী। কর্মস্থলে ফেরার তাড়নায় কে কার আগে উঠবে, এমন প্রতিযোগিতাই ছিল সবার মধ্যে।
এমন চিত্রই দেখা যায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে। দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। রেবাবার থেকে পোশাক ও রফতানিমুখী শিল্পকারখানা খুলে দেওয়া হয়। তাই শনিবার (৩১ জুলাই) ভোর থেকেই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে বিভিন্ন উপায়ে দৌলতদিয়া ঘাটে আসে যাত্রীরা। কঠোর লকডাউনে কর্মস্থলে ফেরা এসব যাত্রীর জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ছোট যানবাহনের চাপ ছিল চোখে পড়ার মতো। একেবারে বিপাকে পড়া মানুষ বৃষ্টির মধ্যেই বের হয়েছে। সেই বৃষ্টি ও কাদা উপেক্ষা করেই অনেকেই আসছেন ফেরিঘাটে। কেউ হেঁটে, কেউ রিকশায়, অটোতে আবার কেউ ব্যক্তিগত গাড়িতে।
অনেককে দেখা গেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ করে ঘাটে আসছেন। তারা এসে সরাসরি ফেরিতে উঠছেন। ফেরিতে ব্যক্তিগত গাড়ি মোটরসাইকেল আর আগত যাত্রীদের নিয়েই ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। ফেরিতে মানা হচ্ছে না কোনো স্বাস্থ্যবিধি।
সরেজমিনে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ৫ নং ফেরিঘাটে অবস্থানকালে দেখা যায়, পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা ভাষাশহিদ বরকত নামক ফেরিটি দৌলতদিয়া ঘাটে এসে পৌঁছালে যাত্রীরা ফেরিতে ওঠার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। কে কার আগে ফেরিতে উঠবে, এমন প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়।
অতপর যানবাহন ধীর গতিতে আনলোড করার পর দৌলতদিয়া ঘাট থেকে কোনো প্রকার যানবাহন ছাড়া ফেরিটি প্রায় ৩ হাজার যাত্রী নিয়ে পাটুরিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এ সময় যাত্রীদের মধ্যে কোনো প্রকার সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধির বালাই দেখা যায়নি।
ঝিনাইদহ থেকে সিএনজি অটোতে দৌলতদিয়া ঘাটে আসা যাত্রী উজ্জল বিশ্বাস বলেন, তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তার অফিস রোববার থেকে। চাকরির সুবাদে যেতেই হবে ঢাকায়। বউসহ ছোট বাচ্চা নিয়ে যেতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। তারপর একটু পরপর বৃষ্টি। কঠোর লকডাউনের মধ্যে ঢাকা যাওয়া খুবই কষ্টকর। কিছু করার নেই। কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়েই যেতে হচ্ছে এখন।
কুষ্টিয়া থেকে দৌলতদিয়া ঘাটে আসা যাত্রী চন্দন শেখ বলেন, সরকারের এমন হঠাৎ সিদ্ধান্ত আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য একটি ভোগান্তি। গণপরিবহন বন্ধ, দূরপাল্লার বাস বন্ধ। এ অবস্থায় ঢাকা ফিরতে আমাদের খুব বিপাকে পড়তে হচ্ছে। ২০০ টাকার ভাড়া ৮০০ টাকা দিয়ে কুষ্টিয়া থেকে দৌলতদিয়া ঘাটে আসছি। এখানে ফেরিতে যে অবস্থা দেখলাম, কোথাও পা ফেলার জায়গা নেই। তারপরও উপায় নেই। কর্মস্থলে ফিরতে হবে।
অ্যাম্বুলেন্স চালক আলিম মাতুব্বর বলেন, দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে প্রচুর মানুষ আসছে। প্রতিটা পল্টুনে যাত্রীর চাপ। ফেরি আসার সঙ্গে সঙ্গেই যাত্রীরা পন্টুনের ওপর উঠে যাচ্ছে। আমরা ফেরিতে উঠতে পারছি না। প্রায় ঘণ্টাখানেক এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক শিহাব উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারের জন্য ৮টি ফেরি থেকে দুপুর ১২টার পর থেকে ১৬টিতে করা হয়েছে। যখন যে ঘাট থেকে যানবাহন নিয়ে ছাড়া প্রয়োজন সেভাবেই ছেড়ে যাচ্ছে।
মীর সামসুজ্জামান/এনএ