বিয়ের দিনে ছুরিকাহত সেই ছাত্রীর মৃত্যু

রংপুরের বদরগঞ্জে বিয়ের দিনে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত মাদরাসাছাত্রী তারমিনা আক্তার ওরফে ফুলতির (১৪) মৃত্যু হয়েছে। টানা ৪ দিন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় রোববার (১ আগস্ট) সকালে মারা যায় ওই ছাত্রী।
এর আগে গত বুধবার (২৮ জুলাই) প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় ওই শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করে সাখাওয়াত হোসেন। ওই যুবক ফুলতির বড় বোনের শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়তার সূত্রে পূর্বপরিচিত ছিল।
বদরগঞ্জ উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নের সাজানোগ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই দিনের পর থেকে অভিযুক্ত সাখাওয়াত পলাতক রয়েছে। তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে মেয়ের পরিবার।
ফুলতি লোহানীপাড়া দাখিল মাদরাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে ওই এলাকার তোয়াব আলীর মেয়ে। বুধবার (২৮ জুলাই) তার বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা শুনে ক্ষুব্ধ সাখাওয়াত ওই দিন ভোরে মিঠাপুকুর থেকে বদরগঞ্জে গিয়ে ফুলতিকে ঘর থেকে ঘুম থেকে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, তারমিনার বড় বোন তাহমিনার বিয়ে হয় মিঠাপুকুর উপজেলার বড়বালা ইউনিয়নের পশ্চিম বড়বালা এলাকায়। আত্মীয়তার সম্পর্কে ওই এলাকার মোনায়েম হোসেনের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন প্রেমের প্রস্তাব দেন তারমিনাকে।
প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে সাখাওয়াত হোসেন তারমিনাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন। বুধবার (২৮ জুলাই) ফুলতির সঙ্গে অন্য ছেলের বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়। এ ঘটনা জানতে পেয়ে শাখাওয়াত হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। পরে মোটরসাইকেলযোগে নিজ বাড়ি থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে ফুলতিদের গ্রামের বাড়িতে যান সাখাওয়াত।
বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে ছিল। সাখাওয়াত ঘুমন্ত ফুলতিকে দরজার কাছে ডেকে নিয়ে ছুরি দিয়ে দুই পা, মুখ, কপাল ও পাজরে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। এ সময় ফুলতি চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে বাড়ির লোকজন ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করেন।
পরে সাখাওয়াতকে ধাওয়া দিলে সে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যান। পরে ফুলতিকে আহত অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার (০১ আগস্ট) সকালে তার মৃত্যু হয়।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সিনিয়র স্টাফ নার্স (ইনচার্জ) রেবেকা সুলতানা বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় মেয়েটিকে গত বুধবার ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে চার দিন ধরে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু প্রচুর রক্তক্ষরণ ও মারাত্মক জখম হওয়ায় তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
লোহানীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাকিব হাসান ডলু শাহ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মেয়েটির পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। কিন্তু অভিযুক্ত যুবক এখনো গ্রেফতার হয়নি।
বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় ২৯ জুলাই মেয়েটির মামা নূর আলম বাদী হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলাটি হত্যা মামলায় পরিণত হয়েছে। পুলিশ ওই আসামিকে গ্রেফতারে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএসআর