রূপগঞ্জে নিখোঁজ ২০ শ্রমিকের ৯ জনের মরদেহ বাড়ির পথে

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কিশোরগঞ্জের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সের নিখোঁজ ২০ শ্রমিকের মধ্যে ৯ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বুধবার (৪ জুলাই) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে উপস্থিত স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জের ৯ শ্রমিকের স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
এ সময় মরদেহ দাফনের জন্য প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন।
প্রথম দফায় হস্তান্তর হওয়া কিশোরগঞ্জের ৯ শ্রমিকের মরদেহের মধ্যে জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার ৬ জন ও জেলার সদর উপজেলার ৩ জন রয়েছেন।
নিহত বক্তিরা হলেন জেলার কমিরগঞ্জ উপজেলার জয়কা ইউনিয়নের মাথুরাপাড়া গ্রামের তাহের উদ্দিনের ছেলে নাঈম ইসলাম (১৮), একই গ্রামের খোকন মিয়ার স্ত্রী জাহানারা (৩৫), একই উপজেলার জাফরাবাদ ইউনিয়নের সাইটুটা গ্রামের স্বপন মিয়ার স্ত্রী সাগরিকা (২২), একই ইউনিয়নের বাদেশ্রীরামপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মুন্না (১৫), একই উপজেলার বারঘড়িয়া ইউনিয়নের চাতাল গ্রামের সুরুজ আলীর মেয়ে ফারজানা (১৯) ও একই উপজেলার নোয়ামবাদ ইউনিয়নের মোলামখারচর গ্রামের সুজন মিয়ার মেয়ে ফাতেমা আক্তার (১৫)।
জেলার সদর উপজেলার কর্শাকড়িয়া ইউনিয়নের শেহড়া গ্রামের আবদুল কাইয়ুমের মেয়ে খাদিজা (১৫), একই উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের ব্রহ্মণকান্দি গ্রামের নিজাম উদ্দিনের মেয়ে শাহানা (১৫), একই উপজেলার কর্শাকড়িয়া ইউনিয়নের জালীয়া গ্রামের মাহতাব উদ্দিনের স্ত্রী শাহানা আক্তার (৪৪)।
জেলার করিমগঞ্জ উপজেলায় জয়কা ইউনিয়নের মাথুরাপাড়া গ্রামের তাহের উদ্দিন তার কিশোর ছেলে নিহত নাঈমের মৃতদেহ বুঝে নারায়ণগঞ্জ থেকে বাড়ির পথে যাত্রা করেছেন।
তিনি জানান, গত মঙ্গলবার বিকেলে সিআইডির ফোন পেয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জের পথে রওনা হন। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে ভেঙে ভেঙে নারায়ণগঞ্জ আসতে তাকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। মরদেহ গ্রহণ করে এখন তিনি বাড়ির পথে রয়েছেন। লাশ গ্রহণের সময় দাফন-কাফনের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ২৫ হাজার টাকা দিয়েছে।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম ঢাকা পোস্টকে জানান, রূপগঞ্জের সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত সাত শিশু শ্রমিকসহ কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন বয়সের ২০ নারী-পুরুষ শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯ জনের মরদেহ আজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর হয়েছে। এখনো আরও ১১ শ্রমিকের পরিবার তাদের স্বজনদের লাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
তিনি আরও জানান, জেলার বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া নিখোঁজদের তালিকায় জেলার সদর উপজেলার আটজন, করিমগঞ্জ উপজেলার আটজন, কটিয়াদী উপজেলার তিনজন এবং মিঠামইন উপজেলার একজনের নাম রয়েছে। এ ছাড়া ঘটনার পর পর মীনা আক্তার (৩০) নামের জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার এক নারী শ্রমিকের মরদেহ বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক জানান, জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা ইউনিয়নের কুকিমাধব গ্রামের হারুন অর রশিদের স্ত্রী নিহত মিনা আক্তারের (৩৩) পরিবারকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল থেকে দুই লাখ টাকার অনুদান দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তিনজন আহত শ্রমিকের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে। নতুন করে যাদের লাশ বাড়িতে আসছে, তাদের পরিবারকেও অনুদান দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকার হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় আগুন লাগে। এতে ৫২ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফরের পক্ষ থেকে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আগুনে পুড়ে মৃত্যুর ঘটনায় রূপগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ূন কবীর বাদী হয়ে কারখানা মালিক আবুল হাসেম ও তার চার ছেলে, প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ আটজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন।
এসকে রাসেল/এনএ