বিয়েবাড়িতে এখন শোক আর আহাজারি

আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নতুন বউকে বাড়িতে আনতে যাচ্ছিলেন মামুন। তবে মুহূর্তেই বিয়ের সব আয়োজন বদলে গেছে বিষাদে। বজ্রপাতে মারা গেছেন বাবা, পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, নৌকার মাঝিসহ ১৭ জন। বিয়েবাড়িতে এখন শুধু কান্না আর আহাজারি। কার কান্না কে দেখবে, কে কাকে সান্ত্বনা দেবে।
মামুন চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নামোসূর্য নারায়ণপুর গ্রামের পাথুর ছেলে। বুধবার (০৪ আগস্ট) পার্শ্ববর্তী পাঁকা ইউনিয়নের নতুন বউকে বাড়িতে আনার দিন ঠিক ছিল তার। বর মামুনকে নিয়ে আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের সদস্যরা বেলা ১১টার দিকে রওনা দেন সেই উদ্দেশ্যে কনের বাড়ির দিকে। নৌকাযোগে নারায়ণপুর ইউনিয়নের আলীমনগর ঘাট থেকে পাঁকা ইউনিয়নের তেলেখালী দক্ষিণ পাঁকা গ্রামের ঘাটে পৌঁছানোর পর দুপুর ১২টার দিকে বজ্রপাতে মৃত্যু হয় ১৭ জনের।
তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও পাঁকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন মাস্টার ঢাকা পোস্টকে জানান, সদর উপজেলার নারায়ণপুর থেকে বউভাতের অনুষ্ঠানে আসার পথে বজ্রপাতে ২০ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে ১৯ জন বউভাতের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। এছাড়াও একজন দক্ষিণ পাকা গ্রামের নৌকার মাঝি। নৌকায় মোট ৫৫ জন যাত্রী ছিলেন।
নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোমিন শরীফ জানান, মামুনের বউ তুলে নেওয়ার দিন ছিল আজ। আত্মীয় স্বজন ও পরিবারের সদস্যরা বেলা ১১টার দিকে পদ্মা নদীতে নৌকাযোগে রওনা হন কনের বাড়ির উদ্দেশ্যে। নৌকাটি পাঁকা ইউনিয়নের তেলেখালী ঘাটে পৌঁছালে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে বর মামুন বেঁচে ফিরলেও তার বাবা পাথু মারা গেছেন। আত্মীয় -স্বজনরাও অনেকে মারা গেছেন।
তিনি আরও জানান, গ্রামজুড়ে এখন কান্নার রোল পড়েছে। হাজার হাজার মানুষ এসে জড়ো হয়েছে। যে শুনছে সেই ছুটে আসছে এদিকে। আমি বাড়ি বাড়ি গিয়ে মৃতদের নাম ঠিকানা জোগাড় করছি। তবে মানুষের এত চাপ যে এই মুহূর্তে মৃতদের নাম ঠিকানা একত্রিত করারও সম্ভব হচ্ছে না।
পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দীন জানান, দক্ষিণপাঁকা তেররশি গ্রামে বিয়ের আয়োজন ছিল। বরের বাড়ি নারায়ণপুর ইউনিয়নে, আর কনের বাড়ি আমার ইউনিয়নে। বরযাত্রী নিয়ে লোকজন দক্ষিণ পাঁকা খেয়াঘাটে পৌঁছানো মাত্রই বৃষ্টি শুরু হয়। তখন তারা ঘাটের একটি ঘরে আশ্রয় নেন। এ সময় বজ্রপাত আঘাত হানে ওই ঘরের ওপর। ঘটনাস্থলেই ১৭ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে ১৬ জন নারায়ণপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। তারা বরযাত্রী ছিলেন। রফিকুল ইসলাম নামে একজন মারা গেছেন পাঁকা ইউনিয়নের। তিনি মাঝি ছিলেন।
মৃতদের মধ্যে ১৬ জনের নাম জানা গেছে। এরা হলেন- জমিলা বেগম (৫৮), তবজুল (৭০), সাদল (৩৫), রফিকুল (৬০), লেচন (৫০), সজীব (২২), টকি বেগম (৩০), আলম (৪৫), পাজু (৪০), সহবুল (৩০), বেলি বেগম (৩২), বাবুল (২৬), মৌসুমী (২৫), টিপু সুলতান (৪৫), বাবু (২০) ও আশিকুল ইসলাম (২৪)। তারা সকলেই নারায়ণপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। রফিকুল পাঁকা ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি মাঝি ছিলেন।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব-আল-রাব্বী বলেন, বজ্রপাতে অনেকেই মারা গেছেন, অনেকে আহত হয়েছেন। তবে কতজন মারা গেছেন ও আহত হয়েছেন সেটি এই মুহূর্তে জানাতে পারছি না। হতাহতদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহে কাজ করছে পুলিশ।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দিন জানান, বিয়ে আগেই হয়েছিল। আজ নতুন বউকে আনতে যাচ্ছিলেন তারা। নৌকাটি ঘাটে এসে পৌঁছার পর বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেছে। ১৬ জন বরযাত্রী মারা গেছেন। শুনেছি পাঁকা ইউনিয়নের একজন মাঝিও মারা গেছেন।
আরএআর