৬১০ বছর ধরে বসে মেলা, ঈদের মতো আনন্দ করেন তারা

শীতকাল মানেই আমেজ আর উৎসব। শীতের আমেজ কাজে লাগিয়ে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় জমে উঠেছে পৌষ মেলা। উপজেলার পলাশতলী ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামে বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুর থেকে এ মেলা শুরু হয়েছে। প্রতি বছর তিনদিনব্যাপী হলেও এবার করোনা পরিস্থিতিতে মেলা হচ্ছে একদিন।
লালন সাধক মাহমুদ শাহ ফকিরের তিরোধান দিবস উপলক্ষে প্রতি বছর পৌষ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার এ মেলা বসে। এ বছর ৬১১তম তিরোধান দিবস। ৬১০ বছর ধরে এ মেলা আয়োজন করে আসছেন এলাকাবাসী। এখানকার মানুষের বিশ্বাস, সাধক মাহমুদ শাহ হেঁটে পানির ওপর দিয়ে নদী পার হতেন।
মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের গ্রামের মানুষের মধ্যে বিরাজ করে আনন্দ-উল্লাস। এ সময়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবারবাড়ি বেড়াতে আসেন নারীরা। মেলায় ১৫ গ্রামের মানুষ জড়ো হন। ভাগাভাগি করে নেন আনন্দ।
এবারের মেলা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় এক কিলোমিটার মাঠজুড়ে নানা ধরনের দোকান বসেছে। শিশুদের খেলনা, তৈজসপত্র ও পুতুলসহ নানা কসমেটিকসের দোকান রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে নানা রকম খাবারের দোকান। বিভিন্ন দোকান ঘুরে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনছেন মেলায় আগতরা।
মেলায় দোকান সাজিয়ে বসা আনাস মিয়া বলেন, আমি ১৫ বছর ধরে মেলায় দোকান নিয়ে বসি। এখানে প্রতি বছর প্রচুর জনসমাগম হয়। প্রচুর জিনিসপত্র বিক্রি হয়।
মেলায় বেতের জিনিসপত্র বিক্রি করছেন কবির মিয়া। তিনি বলেন, বাঁশ ও বেতের কদর আগের মতো না থাকলেও এখানে বেচাকেনা ভালো হয়। যদিও অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মেলার ব্যাপ্তি কম। তবুও বেচাকেনা ভালো।
সন্তানদের নিয়ে মেলায় এসেছেন গৃহবধূ রাশিদা বেগম। তিনি বলেন, আমি ছোটকালে এই মেলায় অনেক মজা করতাম। এখনও করি। বাবার হাত ধরে আমি মেলায় আসতাম; এখন আমার হাত ধরে আসে সন্তানরা।
সাহাপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন বলেন, মেলাকে ঘিরে ছোটকালে যেমন আনন্দ বিরাজ করত। এখনও আমাদের মনে ঠিক একই আনন্দ বিরাজ করে। আমি ছোটকাল থেকে মেলায় আসি।
সাইফুল কবির নামে এক দর্শনার্থী বলেন, আমি ব্যবসার কাজে ঢাকায় থাকি। দুই ঈদ আর এই মেলা; তিন উৎসবে পরিবার নিয়ে বাড়ি আসি। ঈদের মতো মেলা উপভোগ করি আমরা। গ্রামীণ এই সংস্কৃতি আমাদের প্রাণের উৎসব।
মেলার আয়োজক কমিটির সদস্য মাইনউদ্দিন প্রধান বলেন, এবার করোনা সংক্রমণের কারণে মেলা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। মেলায় মাস্ক বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সবকিছু ঠিক আছে।
আয়োজক কমিটির আরেক সদস্য ইসমাইল হোসেন বলেন, আমাদের কয়েক প্রজন্ম মেলা আয়োজনের সঙ্গে জড়িত। আমার বাবা এবং দাদা মেলার আয়োজক কমিটিতে ছিলেন। আমি এখন দায়িত্বে। মেলার সবকিছু ঠিকমতো চলছে।
এএম