চোখ বন্ধ করে বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকবেন তারিন

হৃদয়ের শ্বেতপর্দায় যে প্রিয়জনের মুখচ্ছবি ভেসে ওঠে, ক্যানভাসে তার বহিঃপ্রকাশও ঘটানো যায় রংতুলি দিয়ে। ভালোবাসার আবেগে আপ্লুত হয়ে মনের মাধুরী দিয়ে এমনই এক প্রতিচ্ছবির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বেতবাড়িয়া গ্রামের মশিউর রহমানের মেয়ে তারিন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভালোবেসে মুজিব বর্ষে তিনি এঁকেছেন তার শত ছবি। শুধু রংতুলি আর সুঁই-সুতায় নয়, ইপিল ইপিলগাছের পাতা ও ফুলের রস দিয়েও এঁকেছেন। বঙ্গবন্ধুর গৌরবোজ্জ্বল চেতনা নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতেই তার এই প্রচেষ্টা বলে জানান তারিন।
এবার চোখ বন্ধ করেও বঙ্গবন্ধুর ছবি আকার ঘোষণা দিয়েছেন তারিন। তার এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহযোগিতার আশ্বাস দেয় মেহেরপুর জেলা প্রশাসন।
জানা গেছে, সেই বাল্যকাল থেকেই তারিনের ছবি আঁকার প্রবল বাসনা। স্কুল-কলেজে নানা অনুষ্ঠানে রয়েছে তার স্বরব উপস্থিতি। চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী না হয়েও বিভিন্ন পশুপাখি, ফলমূল আর কবি-সাহিত্যিকের ছবি এঁকে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। সেই সঙ্গে পেয়েছেন নানা সম্মাননা।
পেনসিল, রংতুলি ফলের রস আর গাছের পাতা দিয়ে মনের মাঝে উঁকি দেওয়া মানুষের অবয়ব এঁকেছেন মনের মাধুরী দিয়ে। এ জন্য তার সহপাঠীরা তার নাম দিয়েছেন ‘চারু তারিন’। খ্যাতিমান ব্যক্তিদের ভিন্ন ভিন্ন ভঙ্গির ছবি এঁকেছেন। সব শেষে এঁকেছেন বঙ্গবন্ধুর ছবি।
মুজিব শতবর্ষে রং তুলি দিয়ে ১০০টি, পরে সুঁই-সুতা দিয়ে ১০১টি ছবি আঁকেন। এবং এখন ইপিল ইপিলগাছের পাতা ও ফুলের রস দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি আঁকা শুরু করেছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করেই গৌরবোজ্জ্বল চেতনা নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতেই তার এই প্রচেষ্টা বলে জানিয়েছেন তারিন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর এক হাজার ছবি প্রদর্শনী করার ইচ্ছা আছে তার। তার আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি প্রদর্শনীর উদ্বোধনটি করাতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনাকে দিয়েই। তাহলে তারিনের স্বপ্নপূরণ হবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
তারিন আরও জানান, ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, খুলনার ডিআইজি, মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ শতাধিক মুজিবপ্রেমীর হাতে মুজিব বর্ষের উপহার হিসেবে তুলে দিয়েছেন তার আঁকা বঙ্গবন্ধুর নানা আঙ্গিকের ছবি। তার আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি দুই বাংলায় বিনামূল্যে ১০৫টি বইয়ের প্রচ্ছদ হিসেবেও ছাপা হয়েছে। এখন চোখ বন্ধ করে বঙ্গবন্ধুকে আঁকার চেষ্টা করছেন তারিন। মেহেরপুর জেলার অনেকেই ছবি আঁকা শিখতে আসেন।
তারিনের মা জাহানারা বেগম বলেন, মেয়ে নানা প্রতিভার অধিকারী হলেও সে বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ তার কাছে সেরা আদর্শ। আমরা তাকে নিয়ে গর্ববোধ করি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকারু বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মস্তফা বলেন, তারিন অনেক ভালো ছবি আঁকেন। তার মধ্যে রয়েছে দারুণ প্রতিভা। তার আঁকা ছবি বিভিন্ন মহলে প্রসংশিত হচ্ছে। আমি একজন শিল্পী হিসেবে মনে করি, এসব প্রতিভাকে আরও বিকশিত করতে উপযুক্ত সহযোগিতা, পরিবেশ ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি যে প্রেম তারিন দেখিয়েছেন, তা মূল্যায়নের মতো। এ ছাড়া চোখ বন্ধ করে বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকার চেষ্টা যেন সফল হয়, এর জন্য দোয়া করি। তারিন একজন উঁচু মানের শিল্পী হয়ে উঠবেন।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি তারিনের এই ভালোবাসার বিরল দৃষ্টান্তের প্রশংসা করেন মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মনসুর আলম খান। তারিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে জেলা প্রশাসন সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তিনি।
এনএ