ওয়াসার পাইপ আটকে দিয়েছে ভৈরবের গতিপথ, নৌ চলাচল বন্ধ

২০১৯ সালে বাগেরহাটের মোল্লাহাটে মধুমতি নদীতে খুলনা ওয়াসার পাইপ লাইন বসানো হয়। ৪৫ কিলোমিটার দূর থেকে খুলনা নগরীতে পানি নেওয়ার জন্য বড় আকৃতির পাইপ ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে পাইপ লাইনের পথ নিয়ে। পাইপ লাইন ফকিরহাটের ভৈরব নদী অতিক্রমের সময় মাটির তলদেশ দিয়ে না নিয়ে পানির নিচ দিয়ে পাইপটি নেওয়া হয়। এতে সাড়ে ৫ ফুট উঁচু ওই পাইপটি খালের প্রায় অর্ধেক জায়গা জুড়ে নেয়। পাইপের উপরিভাগে লোহার পাত দিয়ে নদীতে চলাচল আটকে দেয় ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।
ফলে মধুমতি নদীতে রূপসা, ফকিরহাট ও বাগেরহাট সদর উপজেলার সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এমনকি এ নদী থেকে ট্রলার চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ডও দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ওয়াসা কর্তৃপক্ষের এমন অপরিকল্পিত পাইপ লাইন স্থাপনের কারণে একদিকে ব্যাহত হচ্ছে নৌযান চলাচল অন্যদিকে সৃষ্টি হচ্ছে নাব্য সংকট।
এছাড়া নদীতে পানি চলাচলের স্বাভাবিক গতি প্রবাহ হ্রাস পাওয়ায় এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে বৃষ্টি হলে পানি জমে পচে নষ্ট হচ্ছে খেতের ফসল, অন্যদিকে নদীর পানি আটকে মাছের ঘের ডুবে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মাছ চাষিরা।
এই অবস্থায় অতিদ্রুত পাইপ অপসারণ করে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক ও নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ভোগান্তি থেকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে সমস্যা সমাধানে চলতি অর্থবছরের মধ্যে পাইপটি নদীর তলদেশ দিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ।

স্থানীয় নয়ন শেখ, বাবুল সরদার, জামাল শেখসহ কয়েকজন বলেন, এই পাইপের কারণে নদীপথে পণ্য পরিবহনে আমাদের খুব সমস্যা হচ্ছে। নদীটি খনন করা হলেও পণ্যবাহী নৌযানগুলো চলাচল করতে পারে না। কেউ কেউ না জেনে এ পথে এলে আটকে যান নদীতে। অতিদ্রুত ওয়াসার পাইপটি নদীর তলদেশ দিয়ে নেওয়ার দাবি জানান তারা।
ব্যবসায়ী শেখ মনিরুজ্জামান বলেন, নদীতে ব্যারিকেড দেওয়ায় ও পাইপ থাকায় আমরা নদীপথে খুলনা ও বাগেরহাট থেকে মালামাল পরিবহন করতে পারছি না। সড়কপথে মালামাল পরিবহনে প্রায় দ্বিগুণ খরচ হয়।
ফকিরহাটের মূলঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিটলার গোলদার বলেন, নদী খননেন সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকাবাসী। ওয়াসার পাইপটি যদি নদীর তলদেশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তবে এই সমস্যার সমাধান হবে।
এ বিষয়ে ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা বেগম বলেন, আমি সরেজমিনে আটকে দেওয়া জায়গাটি পরিদর্শন করেছি। জেলা প্রশাসক মহোদয়কেও বিষয়টি অবহিত করেছি। পাশাপাশি অন্য কোনো এলাকায় এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে কিনা সেটিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ বলেন, সমস্যা সমাধানে কার্যক্রম শুরু করেছি। চলতি অর্থবছরের মধ্যেই পাইপটি নদীর তলদেশ দিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
তানজীম আহমেদ/আরএআর