সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে ১০৬ দলিল গায়েব, বিপাকে এক পরিবার

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে জমি কিনে এক প্রবাসী পরিবার প্রতারণার ফাঁদে পড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৯ বছর আগে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয় চুরি যাওয়া ১০৬টি দলিলের মধ্যে তাদের এই জমির দলিলও (নং ১০৮৬) ছিল।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ওই জমির বর্তমান দাম প্রায় এক কোটি টাকা। জমির বিক্রেতা প্রভাবশালী চক্রটি জমির দখল নিতে নানা ধরনের হুমকি-ধমকি, মিথ্যা মামলা দেওয়াসহ বিভিন্ন অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন।
এ অবস্থায় প্রবাসী পরিবার আদালতের আশ্রয় নিলে আদালত ওই জমিতে ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর ১৪৪ ধারা জারি করেন। কিন্তু চক্রটি এ অবস্থার মধ্যেও ওই জমিতে কয়েক দিন ধরে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করছে। চার-পাঁচ বছর আগে একইভাবে জোর করে ওই জমির একাংশ দখল করে সেখানে চারচালা একটা ঘর নির্মাণ করেন অভিযুক্ত মুক্তার সরদার, জানান ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগী প্রবাসী হলেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার পশ্চিম উজানচর কছিমদ্দিন পাড়ার সিদ্দিক শেখের ছেলে মো. মন্জুর আলম। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে রয়েছেন। ২০১২ সালে পার্শ্ববর্তী উত্তর উজানচর নছর উদ্দিন সরদার পাড়ার (পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড) চাঁদ আলী সরদারের ছেল মুক্তার সরদারের কাছ থেকে অনেক কষ্টে ১৬ লাখ টাকা দিয়ে ৮৭ নম্বর দাগের ১৬ দশমিক ১০ শতাংশ জমি তার স্ত্রী মোছা. সালেহা খাতুন ও ছোট ভাই মো. মাসুদ শেখের নামে কেনেন। অতঃপর জমির দখল বুঝে নিয়ে সেখানে তারা নানা জাতের গাছ রোপণ করেন। কিন্তু মুক্তার সরদার নানা উপায়ে ওই জমি থেকে প্রবাসী পরিবারের দখল উচ্ছেদের পাঁয়তারা শুরু করেছেন।
১০৬টি দলিল চুরির ঘটনায় ১০৮৬ নম্বর দলিলটি ছাড়া অন্য কোনো জমি নিয়ে কোনো বিবাদ আছে বলে আমার জানা নেই। এই জমির দাতা মুক্তার সরদার অস্বীকার করলেও তাদের রেজিস্ট্রি বায়না দলিলের রেকর্ড তাদের ভলিয়মে সংরক্ষিত আছে। সেখানে জমির চৌহদ্দিসহ যাবতীয় তথ্য উল্লেখ রয়েছে। রেজিস্ট্রি বায়নাও এক প্রকার স্বীকৃত দলিল। দলিলগুলো চুরির ঘটনায় আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
সাজ্জাদ হোসেন, উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার
এ বিষয়ে প্রবাসী মন্জুর আলম মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে জানান, দলিল হারানোর সুযোগ নিয়ে সম্প্রতি মুক্তার সরদার ওই জমিতে পাকা স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু করেন। আমার পরিবারের সদস্যরা বাধা দিতে গেলে তাদের দলিল নিয়ে যেতে বলে এবং তাদের নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়। এলাকায় কয়েক দফা সালিস বৈঠকে হলেও তারা কারও কথায় কর্ণপাত করে না। আমার ধারণা, সাবরেজিস্ট্রার অফিসে দলিল চুরির ঘটনায় মুক্তারের হাত রয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোক্তার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি তাদের কাছে জমি বিক্রি করেছি সত্য। কিন্তু জমিটি মহাসড়কের পাশে তাদের দাবিকৃত স্থানে নয়। তারা মাঠ থেকে জমি নিতে পারে। দলিলে দলিল লেখক ভুল করেছিলেন। তিনি কোনো অন্যায় করছেন না বলে দাবি করেন।
এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সাজ্জাদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, ১০৬টি দলিল চুরির ঘটনায় ১০৮৬ নম্বর দলিলটি ছাড়া অন্য কোনো জমি নিয়ে কোনো বিবাদ আছে বলে আমার জানা নেই। এই জমির দাতা মুক্তার সরদার অস্বীকার করলেও তাদের রেজিস্ট্রি বায়না দলিলের রেকর্ড তাদের ভলিয়মে সংরক্ষিত আছে। সেখানে জমির চৌহদ্দিসহ যাবতীয় তথ্য উল্লেখ রয়েছে। রেজিস্ট্রি বায়নাও এক প্রকার স্বীকৃত দলিল। দলিলগুলো চুরির ঘটনায় আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলে তিনি জানান।
গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর জানান, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিষয়টির প্রতি তাদের তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে। গোয়ালন্দে বিক্রীত জমির ওপর এভাবে অবৈধভাবে পাকা স্থাপনা নির্মাণকাজ শুরু করলে আদালত সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন।
এনএ