চর্মকার দিয়ে চলছে সাধনা সিনেমা হল

চারদিকে হল বন্ধের মিছিলেও রাজবাড়ী শহরের সাধনা সিনেমা হলটি চালু ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির জন্য দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকে। গত শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে চালু করা হয়েছে। কিন্তু দর্শক না থাকায় হল কর্তৃপক্ষ বিপাকে পড়েছে। চারটি প্রদর্শনীর বদলে মাত্র একটি প্রদর্শনী চালানো শুরু হয়েছে। তাতেও দর্শক পাওয়া যাচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজবাড়ী জেলা শহরে একসময় ২০টি সিনেমা হল ছিল। কিন্তু এখন রয়েছে মাত্র দুটি। এর মধ্যে রাজবাড়ী পৌর এলাকায় সাধনা সিনেমা হল এবং কালুখালি উপজেলায় ‘বৈশাখী’ সিনেমা হল। করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত শুক্রবার রাজবাড়ীর সাধনা সিনেমা হল চালু হলেও তা দর্শকশূন্যতায় ভুগছে।
একে তো প্রযুক্তির আভির্ভাব, আবার ডিজিটাল যুগে পদার্পণ করার কারণে মানুষ এখন কাছেই সব পেয়ে যাচ্ছে। তাই সারাদেশে সিনেমা হলের করুণ দশা চলছে। আবার ঘরে ঘরে ডিশ লাইনে সিনেমা দেখা যায়, সিনেমার পাইরেসি ইন্টারনেটের কারণে হলে গিয়ে কেউ আর সিনেমা দেখেন না। তাই দিন দিন এই শিল্পের করুণ দশা শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে সাধনা সিনেমা হলে দেখা যায়, প্রথম শো শুরু হবে বেলা সাড়ে ১১টায়। দেখানো হবে এফ আই মানিক পরিচালিত ও ডিপজল অভিনীত ‘সৌভাগ্য’ নামের ছবিটি। কিন্তু দর্শকশূন্য সিনেমা হলটি। সিনেমা হলের গেটের সামনে বসে থাকতে দেখা যায় চন্দন রবি দাস নামের একজনকে। পেশায় তিনি মুচির (চর্মকার) কাজ করেন। তিনিই হলটির দেখাশোনা করছেন।

সিনেমা হলটির অপারেটর, টিকিট বিক্রেতা ও গেটম্যানর দায়িত্বে রয়েছেন চন্দন রবি দাস। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় দর্শক কেমন হচ্ছে? উত্তরে তিনি বলেন, হল খোলার প্রথম দিন শুক্রবারে সাতজন দর্শক ছিল। পরের দিন শনিবার মাত্র পাঁচজন দর্শক হয়েছিল। আজ রোববার দর্শক না থাকায় এখনো শো শুরু হয়নি।
তিনি আরও বলেন, হলটি চালুর প্রথম দিন শুক্রবার সাতজন দর্শক হয়েছিল। জনপ্রতি ৬০ টাকা করে টিকিট বিক্রি করে পাওয়া গিয়ছিল ৪২০ টাকা। শনিবার টিকিট বিক্রি করে পাওয়া যায় ৩০০ টাকা। আজ সাড়ে ১১টায় শো শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দর্শক না থাকায় শো এখনো শুরু হয়নি।
চন্দন রবি দাস আরও বলেন, স্টাফ রাখলে খরচ বেশি হয়। তাই হলের মালিক আমাকে হলটি চালানোর দায়িত্ব দেন। এতে কিছু টাকা দিতে রাজি হয়েছেন হল-মালিক। তাই মুচির কাজের ফাঁকে হল চালাচ্ছি। আমিই টিকিট বিক্রি করি এবং কম্পিউটারে ছবি চালিয় দিয়ে এসে আবার গেটম্যানের দায়িত্ব পালন করি। মালিক নিয়মিত হলে বসেন না, মাঝেমধ্যে আসেন এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক কাজকর্ম পরিচালনা করেন। তবে দর্শকের উপস্থিতি এমন হলে তিনি হয়তো লোকসান এড়াতে হলটি বন্ধ কর দেবেন।
মো. তুষার নামের এক দর্শক ছবি দেখার জন্য আসেন সাধনা সিনেমা হলে। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করি। এখানে একটা জরুরি কাজে এসেছিলাম। দেরি হবে বলে সময় পার করার জন্য হলে সিনেমা দেখতে আসছি। কিন্তু হলে দর্শক না থাকায় এখনো শো শুরু হয়নি।

নাজমুল হক নামের আরেক দর্শক ছবি দেখতে আসেন হলে। তিনি বলেন, ছবির নামটা ভালো লেগেছে। আর ডিপজলের ছবি দেখে ভালো হবে মনে করেই হলে এসেছি। কিন্তু হলের দরজাও খোলেনি এখনো। দর্শক না থাকায় এখনো শো শুরু হয়নি।
সাধনা সিনেমা হলের মালিক মো. তোফাজ্জেল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন সিনেমা হল বন্ধ ছিল। করোনা-পরবর্তী সবকিছু খুললে আবার একটা সিনেমা এনে চালু করেছি। কর্মচারী রাখলে তার খরচ দিতে হবে। তাই হলের গেটে কাজ করা এক মুচিকেই দায়িত্ব দিয়েছি হল চালানোর। কিন্তু দর্শক একেবারেই নেই।
টাকা দিয়ে সিনেমা এনে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। দর্শক আসছে না। প্রতিদিন একটি করে শো চললেও হচ্ছে তিন থেকে চারজন দর্শক আসছে। এ রকম চলতে থাকলে তিনি হল বন্ধ করে দেবেন বলে জানান।
তিনি আরও বলেন, আমি ৪৪ বছর ধরে সিনেমার ব্যবসা করছি। আগের দিনের কথা মনে পড়লে চোখে জল আসে। একসময় সিনেমা হল খুব জাঁকজমকপূর্ণ ছিল। ভালো ছবি দেখার জন্য দর্শক ভিড় করত। এখন সেসব অতীত। আয়ও গেছে কমে। ভালো সিনেমা তৈরি না হওয়ার কারণে দর্শক এখন আর সিনেমা হলে আসে না।
এনএ