ফাটল ধরা ঘর হস্তান্তর!

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার অসহায় ও ভূমিহীনদের মাঝে দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণে বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভূমিহীনদের নামে দুই শতাংশ খাসজমি বরাদ্দ থেকে শুরু করে ঘর নির্মাণ কাজের প্রতিটি ধাপে অনিয়ম, নিম্নমানের উপকরণ, ফাটল ধরাসহ নানান অভিযোগ উঠেছে।
শেরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প আশ্রয়ণ-২ এর আওতায় উপজেলায় ১৬৩ ভূমিহীন পরিবারে ২ শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে একটি সেমি পাকা গৃহ নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি গৃহ নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয় ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা।
এ ছাড়া নিঁচু জমিতে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এতে দুর্যোগ সহনীয় ঘর দুর্যোগ আসার আগেই পানিতে তলিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করেছেন স্থানীয়রা।
শেরপুর উপজেলায় ১০ ইউনিয়নের মধ্যে সুঘাট ও শাহবন্দেগী ইউনিয়ন ব্যতীত বাকি ৮ ইউনিয়নে ১৬৩ ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। উপজেলার মাকড়কোলা, খামারকান্দি, বাগড়া কলোনী গ্রামের অনেকেই জানায়, আমাদের গ্রামে ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণে নিম্নমানের ইট, খোয়ার পরিবর্তে রাবিশ, নিম্নমানের বালু ও কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে।
এমনকি সুবিধাভোগীদের নিকট থেকে নির্মাণ ব্যয়ের জন্য টাকা পয়সা নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। এ ছাড়া মাকোড়কোলা ও খামারকান্দি গ্রামের এই ঘরের দেয়ালে ফাটল ধরেছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) নিকট অভিযোগ করা হয়েছে।
‘আমাদের গ্রামে ভূমিহীনদের জন্য তিনটি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে নিম্নমানের ইট, বালু ও কাঠ ব্যবহার করা হয়। একটি ঘরের দেয়ালে ফাটল ধরেছে। যেভাবে কাজ হয়েছে তাতে মনে হয় এই ঘর বেশি দিন টিকবে না। এ বিষয়ে আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ করেছি।’ বললেন মির্জাপুর ইউনিয়নের মাকড়কোলা গ্রামের আলাউদ্দিন রনি।
প্রকল্পের ১২ নম্বর উপকারভোগী শেরপুর উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের বাগড়া কলোনী গ্রামের মৃত আবু বক্করের স্ত্রী বাছিরন বেগম। তিনি বলেন, ‘ঘরের কাজ ভালো করার জন্য ৫ বস্তা সিমেন্ট দিয়েছি। তাছাড়া ঢালাইয়ের কাজে রডসহ প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ দিতে হয়েছে।’
এ সময় তার সঙ্গে থাকা ছেলের বউ লাইজু খাতুন বলেন, ‘এসব না দিলে কাজ ভালো হতো না।’
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ১ নম্বর উপকারভোগী একই গ্রামের সেকেন্দার আলীর স্ত্রী গৃহিনী রুবিয়া খাতুন বলেন, ‘আমিও কাজ ভালো করার জন্য দুই বস্তা সিমেন্ট দিয়েছি। কিন্তু ঘরের কাজ ভালো হয়নি। ঘরের মেঝেসহ অন্যান্য কাজ ভালো হয়নি। পলেস্তারা খসে পড়ছে।’
প্রকল্পের ৬১ নম্বর উপকারভোগী মির্জাপুর ইউনিয়নের মাকড়কোলা গ্রামের ছারা খাতুন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘর দিছে, আমি খুশি হচি বাবা। কিন্তু ঘর তৈরিতে সিমেন্ট দিচে অল্প কইরা, বালু দিচে বেশি।’
২৭ নম্বর উপকারভোগী খামারকান্দি ইউনিয়নের খামারকান্দি গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, কাজের সময়ই ঘরের একটি পিলারে ফাটল ধরেছে। তড়িঘড়ি কাজ করায় এ সমস্যা হয়েছে বলে তিনি দারি করেন।’
স্থানীয়রা জানায়, খামারকান্দিতে আরও যে দুটি ঘর নিচু জায়গাতে নির্মাণ করা হয়েছে। যা সামান্য বন্যা হলেই পানিতে তলিয়ে যাবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামছুন্নাহার শিউলী বলেন, প্রকল্পের নকশা ও প্রকল্প অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। ঘর নির্মাণে যে টাকা বরাদ্দ রয়েছে তা অপ্রতুল। দুই একটি জায়গায় নিম্নমানের কাজের অভিযোগ পেলেও সেগুলো ঠিক করা হয়। এ ছাড়া উপকারভোগীদের নিকট থেকে টাকা কিংবা সিমেন্ট নেওয়ার কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী সেখ বলেন, ‘ফাটলের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তবে একটু সমস্যা হয়েছিল, তা আমরা সমাধান করেছি। আর আমাদের কাজে কোনো ধরনের নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়নি। গৃহনির্মাণ কাজে একটি অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে সেগুলো সমাধান করা হয়। উপকারভোগীদের নিকট থেকে নির্মাণসামগ্রী বা কোনো অর্থ নেয়া হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।
এমএসআর