কাজে আসছে না মাদারীপুরের কোটি টাকার ওয়াকওয়ে

মাদারীপুরে আড়িয়াল খাঁ নদের তীর ঘেঁষে নির্মাণ করা হয় শহররক্ষা বাঁধ। বাঁধের ওপর নির্মাণ করা হয় দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে। শহরকে রক্ষা করার পাশাপাশি নদের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়। তবে সঠিক তদারকির অভাবে ও বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় ম্লান হচ্ছে ওয়াকওয়ের সৌন্দর্য। এখন হুমকির মুখে শহররক্ষা বাঁধও।
শহরের পাশ ঘেঁষে বয়ে গেছ আড়িয়াল খাঁ নদ। নদী ভাঙন থেকে শহরকে রক্ষা করতে ৪ বছর আগে নির্মাণ করা হয় বাঁধ ও চার কিলোমিটার ওয়াকওয়ে। বিআইডব্লিউটিএ নিজস্ব অর্থায়নে ৬ কোটি ৬০ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হয় প্রকল্পটি।
দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে ওয়াকওয়ে টিতে বানানো হয় বেঞ্চসহ নানান স্থাপনা। কিন্তু ওয়াকওয়ে টিতে চার বছরেও দেওয়া হয়নি বিদ্যুৎ সংযোগ। সঠিক তদারকির অভাবে এবং বিদ্যুৎ না থাকায় কাজে আসছে না কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ওয়াকওয়ে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হওয়ার পর দর্শনার্থীদের আনাগোনা ছিল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। নদের বুকে নৌকার ছুটে চলা আর বিকেলবেলা আকাশে মেঘের রঙিন রূপ যেন বিমোহিত করে তুলতেন প্রকৃতিপ্রেমীদের। পুরোনো সৌন্দর্য না থাকায় দর্শনার্থীশূন্য হয়ে পড়েছে ওয়াকওয়ে।
সরেজমিন ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওয়াকওয়ের বিভিন্ন স্থানে খসে পড়ায় হাঁটাচলাও যেন দায়। ঝোপঝাড়ে ছেঁয়ে গেছে বসার যায়গা, আস্তানা হয়েছে বিষধর পোকামাকড়ের, বিদ্যুতের খুঁটি থাকলেও নেই সংযোগ, সন্ধ্যা নামলেই তৈরি হয় ভূতড়ে পরিবেশ।
রাত হতে না হতেই চলে মাদকসেবীদের আড্ডা। ঘুরতে এসে ইভটিজিং ও ছিনতাইয়ের মুখোমুখি হতে হয় অনেককেই। ওয়াকওয়েজুড়ে বসানো হয় লাইট পোস্ট, দেওয়া হয়েছে লাইট। দীর্ঘদিন পরে থাকাতে অনেক লাইটপোস্টের বাল্ব চুরি হয়ে গেছে।
অপরদিকে প্রভাবশালী একটি মহল দীর্ঘদিন বালুর ব্যবসা করে আসছে। বর্তমানে তারা রাস্তার সঙ্গে সঙ্গে ওয়াকওয়ে দখল করে ব্যবসা করছে। এমনকি ওয়াকওয়ের সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়ালে ইট দিয়ে বেড়িকেড দিয়ে, কেউ ব্যবসা করছে আবার কেউ দেয়ালে ইট সিমেন্ট দিয়ে স্থায়ীভাবে দেয়াল তুলে বালুর ব্যবসা করছেন।
অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ, বাতি স্থাপন ও ওয়াকওয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করে জেলার মানুষকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ এবং বন্যার হাত থেকে শহরকে সুরক্ষা করতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমনটাই প্রত্যাশা মাদারীপুরবাসীর। দখলদারদের উচ্ছেদ করে ওয়াকওয়ের পুরোনো সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দিয়েছেন জেলার শীর্ষ কর্মকর্তা।
যুবলীগের মাদারীপুরের সহসভাপতি রেজাউল আকন বলেন, ৪ বছর পর হয়ে গেলেও এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। সন্ধ্যার পরে ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি থাকে এখানে। প্রায় সময় এখানে নানা অপ্রিয় ঘটনা ঘটছে এখানে। আমরা চাই কর্তৃপক্ষ যেন দ্রুত এখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়।
মাদারীপুর পৌরসভার মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ বলেন, আমার বিআইডব্লিউটিএর কাছে আবেদন করেছি আমাদের কাছে কার্যক্রমটি হ্যান্ডওভার করলে পৌরসভা দ্রুত চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং নদীর পাড়ে সুন্দর একটা দৃশ্যমান অবস্থা তৈরি হবে।
বিআইডিব্লিউটিএ বরিশাল ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন-উর-রশীদ বলেন, নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর বারবার জেলা প্রশাসক ও মাদারীপুর পৌর মেয়রকে জানিয়েছি। তারা কেন এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারেনি তা বুঝতে পারছি না। তবে আবারও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, বিআইডব্লিউটিএ ও মাদারীপুর পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে।
এমএসআর