পায়রা সেতু দেখার ইচ্ছাপূরণ হচ্ছে শিশু আদিবার

Dhaka Post Desk

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

২৪ অক্টোবর ২০২১, ১১:২৫ এএম


পায়রা সেতু দেখার ইচ্ছাপূরণ হচ্ছে শিশু আদিবার

পায়রা সেতুতে ওঠার জন্য রাত থেকে কান্না শুরু করে শিশু আদিবা

শনিবার রাত থেকেই সাজুগুজু করেছে পায়রা সেতু উদ্বোধন দেখতে আসবে বলে। খুব ভোরে ঘুম ভাঙার পর থেকেই বারবার বলছিল কখন যাবে সেতু দেখতে। রোববার সকাল ৮টায় তাকে নিয়ে আসা হয় সেতুর এলাকায়। এখন বায়না ধরেছে সেতুতে উঠবে। কিন্তু উদ্বোধনের আগে তো সেতুতে উঠতে পারছি না। 

কথাগুলো বলছিলেন পিকআপচালক নাছির উদ্দিন। পায়রা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভাগনিকে কোলে নিয়ে এসেছেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের বাড়ি রেবুখালি ইউনিয়নের রেবুখাল গ্রামে। ভাগনির বয়স ৪ বছর। গাড়ির ট্রিপ ছিল সকালে। কিন্তু ভাগনিকে কান্নাকাটিতে ট্রিপ বাদ দিয়ে দিয়েছি। ছোট মানুষ পায়রা সেতু দেখার জন্য খুব কাঁদছিল। ওর মনে কষ্ট দেওয়া ঠিক হবে না।

নাছির বলেন, তাকে নিয়ে আসার মতো পরিবারে আর কেউ নেই। সেতু উদ্বোধন হলে চেষ্টা করব ওকে সেতুতে উঠিয়ে ইচ্ছে পূরণ করার। ওর জন্মেরও আগে থেকে সেতু নির্মাণ শুরু হয়। বাড়ি থেকে সেতু দেখা গেলেও কখনো উঠতে পারেনি। তবে ঘরে প্রায়ই সেতুতে ওঠার জন্য বলত। আমরা সান্ত্বনা দিতাম উদ্বোধনের পর নিয়ে যাবে। পরশু শুনেছে সেতুতে আজ ওঠা যাবে। তাই রাত থেকেই কান্নাকাটি শুরু।

পায়রা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের সেতু। এই সেতুর মাধ্যমে এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য জড়িত। তেমনি আবেগও। যেমন আবেগ জড়িয়ে আছে ৪ বছরের আদিবার। প্রসঙ্গত, ভার্চুয়ালি সেতুর উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

Dhaka Post
 পায়রা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভাগনিকে নিয়ে এসেছেন মামা

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের ১০ মেগা প্রকল্পের আওতায় নির্মিত পায়রা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। পায়রা সেতুর দৈর্ঘ্য ১৪৭০ মিটার বা ৪ হাজার ৮২০ ফুট এবং প্রস্থ ১৯.৭৬ মিটার। এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল পদ্ধতিতে নির্মিত দেশের দ্বিতীয় সেতু পায়রা। তবে দেশে প্রথমবারের মতো ব্রিজ হেলথ মনিটরিং সিস্টেম (সেতুর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ) চালু করা হয়েছে।

যা বজ্রপাত, ভূমিকম্প বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অতিরিক্ত মালামালবোঝাই যানবাহন উঠলে সেতুটি ভাইব্রেশন তৈরি করে ক্ষতির শঙ্কা থাকলে সংকেত দেবে। কর্ণফুলি সেতুর মতোই পায়রায় ২০০ মিটার স্প্যান ব্যবহৃত হয়েছে। যা পদ্মা সেতুর স্প্যানের চেয়েও বড়। নদীর মাঝখানে মাত্র একটি পিলার ব্যবহার করা হয়।

১৭ ও ১৮ নম্বর পিলারের পাইল ১৩০ মিটার গভীর, যা দেশের সর্বোচ্চ গভীরতম পাইল। সেতুটি নদীর জলতল থেকে ১৮ দশমিক ৩০ মিটার উঁচু। উভয়পারে ৭ কিলোমিটারজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে সংযোগ সড়ক। পিলারের পাশে স্থাপন করা হয় নিরাপত্তা পিলার। সাবস্টেশনের মাধ্যমে সেতুতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। থাকছে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা।

দেশি-বিদেশি ১৩শ'র অধিক শ্রমিক ৫ বছর কাজ করে নির্মাণ করেছেন সেতুটি। তবে প্রকল্প অনুমোদন থেকে উদ্বোধন পর্যন্ত ৯ বছরের মতো সময় লেগেছে সেতু চালু হতে। সেতুতে ৩২ স্প্যান, ৫৫ টেস্ট পাইল, ১৬৭ বক্স গার্ডার, ২৮৬ পাইল, ৩১ পাইলক্যাপ, ২২৪টি আই গার্ডার স্থাপন করা হয়েছে। মূলত ২০১২ সালের ৮ মে মাসে একনেকে অনুমোদন পায় পায়রা সেতু প্রকল্প। 

বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এতে ব্যয় ধরা হয় ৪১৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এরমধ্যে কুয়েত ফান্ড থেকে ৩৩৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। বাংলাদেশ সরকার জোগাবে ৭৭ কোটি ৩ লাখ টাকা। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফোরলেনবিশিষ্ট পায়রা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

বাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়ায় ২০১৫ সালের ৩১ মে ব্যয় প্রাাক্কলন বাড়িয়ে ৪১৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়। ২০১৭ সালের ২০ জুন সংশোধিত ব্যয় প্রাাক্কলন করে হয় ১ হাজার ২৭৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা উন্নীত করা হয়। যাতে ব্যয় বেড়ে যায় ৮৬৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। দ্বিতীয় দফায় ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সংশোধন করে করা হয় ১৪৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

সময় বাড়ানো হয় ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে শুরু হয় সেতুর ভৌত কাজ। কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট, ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ বিনিয়োগে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘লনজিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন’ সেতুটি নির্মাণ করে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমএসআর

Link copied