অন্ধকার ছেড়ে আলোর পথে সেই ‘পিচ্চি আপেল’

রংপুরের অপরাধ জগতে ‘পিচ্চি আপেল’ নামটি কারও অজানা নয়। হত্যা, চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধের ঘটনায় তার নাম এসেছে বারবার। চার বছরে ১৫টি মামলার আসামি হন তিনি। সময়টা ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল। তখন তার বয়স ও জ্ঞানের পরিধিও কম ছিল। অসৎ সঙ্গ ও পরিস্থিতির কারণে অল্প বয়সেই তার নামের আগে ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ তকমা লাগে। গ্রেফতারও হয়েছেন বেশ কয়েকবার।
তবে সেই আপেল এখন বদলে গেছেন। নিজের ভুল বুঝতে পেরে অন্ধকার জগত ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরেছেন তিনি। এখন সামাজিকভাবে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সমাজের সবার সহযোগিতায় সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপনের ধারা ধরে রাখতে চান আরিফুল ইসলাম আপেল।
রোববার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে রংপুর নগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরদিঘর এলাকায় নিজ বসতবাড়িতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা জানান তিনি। এ সময় তার মা, স্ত্রী ও সন্তান ছাড়াও স্থানীয় এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে আপেল বলেন, ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত অসৎ সঙ্গ ও পরিস্থিতির শিকার হয়ে আমি বেশ কয়েকটি মামলায় জড়িয়ে পড়ি। ওই সময় আমি অপ্রাপ্ত বয়স্ক এবং সৎ উপদেশ দেওয়ার মতো কেউ না থাকায় অনেকেই আমাকে ব্যবহার করেছে। এতে করে আমার নামের সাথে ‘সন্ত্রাসী’ তকমা জুড়ে যায়। আমি আপেল থেকে হয়ে যাই ‘পিচ্চি আপেল’। সেই সময় আমি বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে যাই।
পরবর্তীতে আমি নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হই। ভুল বুঝতে পারি। আমার পরিবারের সদস্যদের পরামর্শে এবং সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে ২০১৪ সাল থেকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন শুরু করি। বর্তমানে আমি ভিটি বালুর ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছি।
তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালে সুস্থ জীবনে ফেরার পর দীর্ঘ ৭ বছরে আমি কোন আইনশৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত হইনি। গেল সাত বছরে রংপুরের কোনো থানায় আমার নামে মামলা তো দূরের কথা একটি জিডিও হয়নি। এ ছাড়া সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা থেকে দূরে থাকতে আমার পূর্বের মুন্সিপাড়া এলাকার বাড়িটি বিক্রি করে অন্যত্র চলে আসি।
প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে আপেল বলেন, আমার নামে দায়েরকৃত ১১টি মামলায় আমি বেকসুর খালাপ পেয়েছি। ওই মামলাগুলোর চার্জশীটে আমার নাম ছিল না। বর্তমানে আমার নামে ৪টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। বিজ্ঞ আদালতের নিয়ম মেনে আমি মামলাগুলোতে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে আসছি। আমার বিশ্বাস চলমান মামলাগুলো থেকেও আমি বেকসুর খালাস পাব। অন্যথায় বিজ্ঞ আদালত যদি আমাকে কোনো শাস্তি প্রদান করে, আমি তা মাথা পেতে নেব।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনে সকলের সহযোগিতা চেয়ে বলেন, আমার সম্পর্কে সামাজিকভাবে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। এ সময় সেখানকার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জামাল উদ্দিন, প্রফেসর শহিদুল ইসলাম, রেজাউল ইসলাম, সাজু মিয়া, মাহাবুর রহমান, সাহাবুল মিয়াসহ স্থানীয় এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
আপেলের স্বাভাবিক জীবনযাপন প্রসঙ্গে প্রফেসর শহিদুল ইসলাম বলেন, আগে তো অনেক কিছুই শুনেছি। কিন্তু গেল সাত বছর ধরে তাকে খুব কাছ থেকে দেখছি। নতুন করে এখন পর্যন্ত কোনো অপরাধের সাথে তার যোগসূত্র নেই। ভাল হয়ে যাবার সুযোগটা কাজে লাগাতে ছেলেটা (আপেল) চেষ্টা করছে। এখন আমাদের উচিত তাকে অন্ধকার পথ থেকে আলোর পথে আসার সুযোগ দেওয়া।
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জামাল উদ্দিন বলেন, আমাদের এলাকায় সাত বছর ধরে বসবাস করছে। কেউ তার নামে কোনো অভিযোগ করেনি। কারো সাথে কোনো বিরোধ বা অপরাধ কর্মকাণ্ডে তার যাওয়া-আসা নেই। যদি অপরাধ জগতে থাকার ইচ্ছে থাকত, তাহলে কি শহরের বাড়ি বিক্রি করে গ্রামে এসে থাকত? এখন এলাকায় বালু শ্রমিক হিসেবে সে (আপেল) কাজ করছে। আমরা সবাই চাই ছেলেটা স্বাভাবিক জীবনযাপন করুক।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই