ঢাকার বাজারে পাটের চাহিদা বেশি তাই দামও ভালো

পাট চাষ করে ঘরে তুলতে দামের চেয়ে বেশি খরচ হতো বলে চাষিরা বলত পাটের টাকা পায়টে (শ্রমিক) খায়। তবে এ বছর চাষিদের তেমন অভিযোগ নেই। গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এ বছরও পাটের ব্যাপক চাষ হয়েছে শরীয়তপুরে। দামও পেয়েছে ভালো। গতবারের তুলনায় বেড়েছে লক্ষ্যমাত্রাও।
বিগত বছরগুলোতে পাট বিক্রি করে লাভ না হলেও গত বছর থেকে পাটের দাম পেয়ে ভালো লাভ করছেন চাষিরা। যে পাট ৬০০-৭০০ টাকা মণ হিসেবে বিক্রি করত চাষিরা সেটা এ বছর ২ হাজার ৫শ থেকে ৩ হাজার ২শ টাকায় পর্যন্ত বেচা-কেনা হচ্ছে।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে পাটের বীজ বপনের সময় অনাবৃষ্টির কারণে জমিতে সেচ দিয়ে চাষ করতে হয়েছে। ফলে উৎপাদন খরচ কিছুটা বেড়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো। গত দু’মাস আগে থেকেই পাট ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। বাজারে পাটের দাম ভালো থাকায় এ বছর লাভবান হয়েছেন এ অঞ্চলের পাটচাষিরা। প্রতি মণ পাট চাষ থেকে শুরু করে বিক্রিযোগ্য করা পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় দেড় হাজার টাকা। এ বছর জেলায় পাট চাষের শুরুতে ২৭ হাজার ৬শ ৪০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাষ করা হয়েছে ২৭ হাজার ৬শ ৫০ হেক্টর জমিতে।

চিকন্দি ইউনিয়নের পাটচাষি কৃষক এমরান হাকিম বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে পাট করতে ৭-৯ হাজার টাকা খরচ হয়। আমি গত বছর পাঁচ বিঘা জমিতে পাট করেছিলাম। বিঘাপ্রতি ১১-১২ মণ ফলন পেয়েছি। বাজার ভালো হওয়ায় দামও পেয়েছি। এবারও ৭ বিঘা পাটের আবাদ করেছি।
শুভ কর্মকার বলেন, আমি ১৫ বছর ধরে পাট চাষ করে আসছি। দিন দিন পাটের দাম কম হওয়ায় বেশ কয়েকটি জমি ছেড়ে দিয়েছি। গত বছর মাত্র এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। ফলনও ভালো হওয়ায় দামও পেয়েছি। ২ হাজার টাকা মণ বিক্রি করেছি। দাম ভালো পাওয়ায় এবার আমি তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। পাটের রোগবলাই তেমন নেই। পাটও ভালো হয়েছে। যে দাম আছে এতে লাভ হবে ভালোই।
আঙারিয়া বাজারের পাট ব্যবসায়ী অঞ্জন পাল বলেন, গত বছর থেকে দেশে পাটের দাম বেড়েছে। ঢাকার বাজারে এখন পাটের চাহিদা বেশি। এবার বৃষ্টি কম ফলে পাটের মান কিছুটা কমে গেছে। তা না হলে বাজার আরও চড়া হত।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. গোলাম রসুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, শরীয়তপুরে গত বছরের তুলনায় এ বছর পাটের ফলন ভালো হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার থেকে ১০ হেক্টর জমিতে বেশি চাষ হয়। আমরা সব সময় চাষিদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। তারা নিজম্ব সেচের মাধ্যমে জমিতে পানি দিয়েছে। পাটের বাজারও ভালো। মুখ ফিরিয়ে নেওয়া চাষিরা আবার পাট চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরআই