সুনামগঞ্জে ঘর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার, এমন স্লোগান হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রামে জনপ্রিয় এখন। জেলার ১১টি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার ৩ হাজার ৯০৮ দরিদ্র পরিবার প্রধানমন্ত্রীর এই উপহার পাচ্ছে। শনিবার (২৩ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৪০৭টি পরিবারের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘরের চাবি ও দলিল বুঝিয়ে দিয়েছেন। তবে ঘর প্রদানে স্থানীয়ভাবে কোথাও কোথাও অনিয়মের অভিযোগও উঠেছে।
স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপকারভোগী ভূমি ও গৃহহীন অনেক পরিবারের কাছ থেকে উপজেলা শহর থেকে ঘরের মালামাল পরিবহন বাবদ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এমনকি মিস্ত্রির খরচও বহন করতে হচ্ছে উপকারভোগী পরিবারকে।
শাল্লা উপজেলার নারকিলা গ্রামে প্রথমে ১৫টি ঘরের কাজ শুরু হয়। সম্প্রতি আরও ১০টি শুরু হচ্ছে। এই গ্রামের আলমগীর কবির জানান, ঘর পেতে পরিবারপ্রতি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো খরচ করতে হচ্ছে তাদের। কেউ কেউ টাকা খরচ করতে না পারায় ঘরই তৈরি করতে পারছেন না। তিনি জানান, তারা প্রতিটি ঘরের মালামাল পরিবহন ও মিস্ত্রির খরচ বাবদ এই টাকা খরচ করেছেন।
একই গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, মালামাল আনা, রড, স্কু কেনা এবং কাঠমিস্ত্রিকে টাকা দেওয়াসহ প্রায় ১৫ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে তাদের। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য এলাইছ মিয়া তাদের এই টাকা খরচ করতে হবে জানিয়েছেন বলে জানান তিনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য এলাইছ মিয়ার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। আশ্রয়হীনদের খরচের টাকা দেওয়া প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এই জবাব দিতে পারবেন বলে জানান তিনি।
শাল্লা ইউএনও আল মুক্তাদীর আহমদ বলেন, শাল্লার প্রত্যন্ত এলাকায় ঘরের মালামাল পৌঁছাতে খরচ বেশি হচ্ছে। এ জন্য বলা হয়েছে কষ্ট করে পারলে তারা নিজেরাই মালামাল নেওয়ার জন্য। অন্য খরচের বিষয়ে তার জানা নেই বলে জানান তিনি।
এদিকে ধর্মপাশায়ও অনেক এলাকায় আশ্রয়হীনদের দিতে হচ্ছে পরিবহন খরচ। এই উপজেলায় আশ্রয়হীনরাই নিজেদের ঘরের কাজে ব্যবহৃত বালু সরবরাহ করেছেন। যারা উচ্চবিত্ত, তারা বালুর টাকা পেয়েছে। নিরীহরা এখনো পায়নি।
ধর্মপাশা ইউএনও মো. মুনতাসির হাসান বলেন, গৃহহীনরা নিজেরা বালু সরবরাহ করলেও তাদের সবারই বালুর টাকা দেওয়া হয়েছে। উপজেলার ৩০০ ঘরের মালামাল পৌঁছে গেছে। কোথাও কোনো গৃহহীনকে পরিবহন খরচের টাকা দিতে হয়নি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বললেন, কোথাও কেউ গৃহ নির্মাণের জন্য পরিবহন খরচের টাকা নিতে পারবেন না। নিলে অপরাধ হবে। তথ্য গোপন করে সামর্থ্যবান কেউ ঘর পেলে তার ঘর ফেরত নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিভিআরপি প্রকল্পের আওতায় জেলার ১১টি উপজেলার নিজ নিজ উপজেলা প্রশাসন প্রায় ৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ঘরগুলো নির্মাণ করছে। ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে ২ শতাংশ জমিতে দুটি শুবারঘর, একটি রান্নাঘর, একটি বাথরুম এবং প্রতিঘরেই ছোট বারান্দা রয়েছে।
এনএ