বঙ্গবন্ধুর প্রতি কৃষকের অভিনব ভালোবাসা

দিগন্তজোড়া মাঠ। চারিদিকে সোনালী ফসল। আর সেই কৃষকের রক্ত-ঘামের ফসলে ভেসে উঠছে চির পরিচিত এক মুখ। তিনি সোনার বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
কোনো রঙের ছোঁয়ায় নয়, নয় কোনো শিল্পীর তুলিতে। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পাড়া খালবলা গ্রামে কৃষক আব্দুল কাদিরের এ এক অনন্য সৃষ্টি। ক্ষেতে লালশাকের বীজ ও সরিষা বপন করে বেড়ে ওঠা সেই চারায় ফুটিয়ে তুলেছেন জাতির পিতার অবয়ব।
শুধু জাতির পিতা নয়; এতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে জাতীয় ফুল শাপলা, স্মৃতিসৌধ এবং পানিতে ভাসমান নৌকা। সঙ্গে আঁকা রয়েছে ‘মুজিব ১০০ বর্ষ’। এ কাজে আব্দুল কাদিরকে সহযোগিতা করেছেন স্থানীয় কিছু যুবক।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু ও দেশের প্রতি ভালবাসা থেকেই এ শিল্পকর্ম করেছেন বলে জানালেন কৃষক আব্দুল কাদির। তিনি বলেন, 'আমি বঙ্গবন্ধুকে খুবই ভালোবাসি। এবার মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে অনেকে অনেক কিছুই করছে। আমি তো কৃষক মানুষ, বেশি কিছু করতে পারব না। তবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা থেকে কিছু একটা করতে চেয়েছি।'
আব্দুল কাদির বলেন, 'কিছুদিন আগে বাড়ির পাশে ৩৩ শতক জমিতে সরিষা ও লাল শাকের বীজ বপন করি। এরপর ১ ডিসেম্বর থেকে পাড়া খালবলা বন্ধুমহল ক্লাবের সদস্যদের সাহায্য নিয়ে জমিতে বিশেষ প্রক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, স্মৃতিসৌধ, নৌকা, শাপলা ও মুজিববর্ষ আঁকা হয়। এখন ফসলের চারা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোও দৃশ্যমান হচ্ছে। মানুষ যেন দেখতে পারে সেজন্য ক্ষেতের এক পাশে বাঁশ দিয়ে ওয়াচটাওয়ার বানিয়ে দেয়া হয়েছে।'
বন্ধুমহল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাইমুল ইসলাম বলেন, 'কৃষক আব্দুল কাদির এমন কিছু করার জন্য আমাদের বলেন। আমরা ইন্টারনেটে ছবি দেখে সেগুলো মাঠে অঙ্কন করি। জাতির পিতার প্রতি এমন সম্মান প্রদর্শনের অংশীদার হতে পেরে আমরাও গর্ববোধ করছি।'
কৃষক কাদিরের ৩৩ শতক জমির এই জীবন্ত ক্যানভাস দেখতে ভিড় জমাচ্ছে আশপাশের এলাকার মানুষ।
ইমাম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি বলেন, একজন কৃষকের এমন শিল্পকর্মই বলে দেয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সাধারণ মানুষ তাদের হৃদয়ে কতখানি ধারণ ও লালন করে। আমরা তার এ কাজকে সম্মান জানাতেন এখানে ছুটে এসেছি।
কাদিরের এ অনন্য শিল্পকর্মের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হবে বলে মনে করেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন। তিনি বলেন, আমরা অনেক সময় বলে থাকি ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি। এই কৃষক কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ করে, বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে তার ফসলের মাঠে নিয়ে এসেছেন। আমরা তার এ কর্মকে স্যালুট জানাই এবং আগামীতে উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ তার পাশে সব সময়ই থাকবে।
এসপি