দুর্ভোগের অপর নাম দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার খ্যাত দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ। এ ছাড়া দুর্ভোগের অপর নামও এই দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ। এ পথে দুর্ভোগহীন নদী পার হওয়া প্রায় অসম্ভব। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে পার হতে হয় এ ঘাট। এ নৌপথে যাতায়াতকারী চালক, যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের মূলবান কর্মঘণ্টা নষ্ট হয় উভয় ঘাটেই। এতে প্রতিদিন গড়ে ৬০ হাজার কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ৭৮৭টি ট্রাক দৌলতদিয়া থেকে নদী পার হয়ে পাটুরিয়া যায়। পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া ঘাটে আসে ৭৮৭টি ট্রাক। যাত্রীবাহী ৬০৬টি বাস দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়া এবং পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া ঘাটে আসে ৬০৬টি বাস। প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস, পিকআপ, দেড়টনের ২৩শ গাড়ি দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়া যায়। আবার পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়ায় আসে ২৩শ গাড়ি।
ট্রাক-বাস ও পিকআপ চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতি ট্রাক দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে গড়ে ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করে নদী পারাপার হয়। যাত্রীবাহী বাস গড়ে ৩ ঘণ্টা এবং পিকআপ, প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস ৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করে পার হয়।
সে হিসেবে ২৪ ঘণ্টায় ট্রাক চালকের দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া উভয় ঘাটে ৩৭ হাজার ৭শ ৭৬ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। যাত্রীবাহী বাসের ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৬শ ৩৬ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়।

প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস ও পিকআপের ১৩ হাজার ৮শ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। সব মিলে প্রতিদিন ৬০ হাজার কর্মঘণ্টা নষ্ট হয় উভয় ঘাটে। সে হিসেবে বর্তমানে এ নৌপথ ব্যবহার করা যানবাহন চালক, যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের প্রতি মাসে ১৮ লাখ আর বছরে নষ্ট হচ্ছে ২ কোটি ১৬ লাখ মূল্যবান কর্মঘণ্টা।
এ প্রতিবেদন তৈরি করতে বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট অফিসের রেজিস্টার্ড খাতা সূত্রে ২৩ অক্টোবর থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৪২শ বিভিন্ন প্রকার যানবাহন দৌলতদিয়া ঘাট থেকে পাটুরিয়া ঘাটে যায়। সে হিসেবে পাটুরিয়া ঘাট থেকে দৌলতদিয়া আসে ৪২শ বিভিন্ন প্রকার যানবাহন।
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরি ঘাট এলাকায় সরেজমিন অনুসন্ধান করে জানা যায়, কর্মঘণ্টা অপচয় হওয়ার মূল কারণ ফেরি ঘাটে অব্যবস্থাপনা, মহাসড়কে সিরিয়াল অমান্য, ফেরি সংকট, নদীতে নাব্য সংকট, অতিরিক্ত স্রোত এবং ঘন কুয়াশা। এ সমস্যাগুলো নিয়েই প্রতিনিয়ত দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যাতায়াত করতে হয়।
একাধিক যানবাহন চালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটের বেশির ভাগ সমস্যাগুলো কৃত্রিম। অনৈতিক সুযোগ-সুবিধার জন্য ঘাট সংশ্লিষ্ঠরা যানজট সৃষ্টি করে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করে। তবে ফেরি সংকটের পাশাপাশি কিছু প্রাকৃতিক সমস্যাও রয়েছে।

এ সময় সুজন নামে এক পণ্যবাহী ট্রাক চালক বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটের দালাল থেকে শুরু করে ঘাট সংশ্লিষ্ট সবাই অর্থনৈতিক সুবিধা নেয়। সুবিধা না দিলে দুর্ভোগের মাত্রা দ্বিগুন বেড়ে যায়।
গোয়ালন্দ রাবেয়া ইদ্রিস মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল কাদের বলেন, দৌলতদিয়া ঘাটে প্রতিনিয়ত যানজটের কারণে কর্মঘণ্টা অপচয় হচ্ছে। আর কর্মঘণ্টা অপচয় হওয়ায় দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. শিহাব উদ্দিন জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট ব্যবহার করে গড়ে প্রতিদিন বিভিন্ন প্রকার ৪২শ যানবাহন যায়। এ ছাড়া শিমুলিয়া-বাজার নৌরুট বন্ধ থাকার কারণে প্রতিনিয়ত দৌলতদিয়া ঘাটে কিছু যানবাহন ফেরি পারের অপেক্ষায় থাকে।
মীর সামসুজ্জামান/আরআই