৩ বোতল পানিতে ক্যান্সারের চিকিৎসা, তদন্ত শুরু

Dhaka Post Desk

জেলা প্রতিনিধি, লালমনিরহাট

০৪ নভেম্বর ২০২১, ০৫:৪৩ পিএম


মাত্র তিন বোতল পানি দিয়ে মরণব্যাধি ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দিয়ে আসছেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনার চিকিৎসক আলতাবুর রহমান বাদশা। বাদশার দাবি দীর্ঘদিন গবেষণার মাধ্যমে এ রোগের ওষুধ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। এদিকে হোমিও চিকিৎসক বাদশা ভুল চিকিৎসা দিয়ে আসছেন- এমন অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। 

বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার কাকিনার ওই বাড়িতে গড়ে ওঠা চেম্বার ও গবেষণা কার্যলয় পরিদর্শন করেছে তদন্ত কমিটি। এ সময় চিকিৎসা দেওয়া ওষুধসহ বিভিন্ন সামগ্রী সংগ্রহ করা হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডাক্তার আব্দুল কাদের গনি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যানিটারী ইন্সপেক্টর তোফাজ্জল হোসেন ও ডাক্তার সাইফুল ইসলামকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

Dhaka Post

তদন্ত টিম বলছে, জেলা সিভিল সার্জনের নির্দেশে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। সে জন্য তদন্ত করতে এখানে এসেছি। চিকিৎসার বিভিন্ন সামগ্রীসহ কিছু ওষুধ সংগ্রহ করে ঢাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। সেখানে ল্যাব টেস্টের ফলাফল এলে পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তবে তদন্ত টিমের দাবি, এটি সম্পূর্ণ ভুল উপায়ে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন হেমিও চিকিৎসক বাদশা। তবে তিনি যদি গবেষণা করে এ রোগীর চিকিৎসার উপায় বের করে থাকেন তাহলে স্বাস্থ্য বিভাগে জানানো প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেটি তিনি করেননি।

সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রামের লংদু থেকে মায়ের চিকিৎসা নিতে এসেছেন চাঁন মিয়া (৩৬)।  ১৫ দিন আগে চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মায়ের পাকস্থলীতে ক্যান্সার ধরা পড়ে। কিন্তু ডাক্তার তাকে জানিয়ে দেন অবস্থা ভাল না। হতাশ চাঁন মিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধমে খোঁজ পেয়ে লালমনিরহাটের বাদশার। তার চিকিৎসায় ক্যান্সার ভালো হয় এমন বিশ্বাসেই তিনি কষ্ট করে এখানে এসেছেন। 

Dhaka Post

চাঁন মিয়ার মতো ঢাকার জুরাইন থেকে এসেছেন আবু বক্কর সিদ্দিক মিয়া। সিদ্দিকের ৬ বছর ৭মাস বয়সী ছেলে গোলাম মোস্তফা ক্যান্সারে আক্রান্ত। ঢাকার মিটফোর্ড ক্যান্সার হাসপাতালের শিশু ইউনিট-২ এ কিছু দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর টিকিৎসক জানিয়ে দেন তাকে ভালো করা সম্ভব নয়। পরে সিদ্দিক ১৫ দিন আগে বাদশা মিয়ার কাছে চিকিৎসা শুরু করেন। ১৫ দিনে ছেলের কী উন্নতি হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, চিকিৎসা শুরুর আগে সারাক্ষণই তার শরীরে জ্বর থাকলেও এখন নেই। ১৫ দিনের ঔষধ শেষের দিকে তাই আবার নিতে এসেছি। 

ক্যান্সারের চিকিৎসা নিয়ে কথা বলতে চাইলে বাদশা মিয়া প্রশাসনের অজুহাত দিয়ে সাংবাদিকের সাথে কোনো কথা বলবেন না জানিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে যদি কোনো কিছু জানার থাকে তাহলে যারা আমার এখানে চিকিৎসা নেন তাদের সাথে কথা বলেন। সাক্ষাতকার দেওয়ার বিষয়ে প্রশাসন থেকে বাধা আছে। এখন পর্যন্ত ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় তিনি সন্তুষ্ট আছেন বলেও জানান।

কাকিনা বাজারের একাধিক লোকের সাথে কথা জলে জানা যায়, তার চিকিৎসায় ক্যান্সার ভালো হয়েছেন এমন মানুষের কথা কারো জানা নাই। তবে বাহিরে থেকে এ চিকিৎসকের কথা জানতে ফোন করেন।

Dhaka Post

চিকিৎসক বাদশার ছেলে শাহাজালাল মিয়া একজন এমবিবিএস চিকিৎসক। তিনি বলেন, সাইন্স বিভিন্নভাবেই প্রমাণিত হয়ে থাকে। হয়তো কেউ চিকিৎসা নিয়ে উপকার পেয়েছেন। তার কাছ থেকেই কেউ শুনেছেন এভাবেই হয়তো চলছে। এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আপনি-আমি কেউ দিতে পারব না।

কালীগঞ্জ উপজেলার ৮নং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শহীদুল হক শহীদ বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি তিনি হোমিও প্যাথ চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। কিন্তু তার চিকিৎসায় ক্যান্সার ভালো হয়েছে এমন কথা তিনি কারো কাছেই শুনিনি।

চিকিৎসক বাদশা মিয়া বলেন, আমার টাকা-পয়সার কোন অভাব নেই। আমি এই চিকিৎসা না করলেও চলতে পারব। রোগীরা আমার এখানে আসে তাই তাদের চিকিৎসা দিয়ে আসছি। আমি এখনো এ রোগের গবেষণা শেষ করিনি।

শেষ না করেই চিকিৎসা কেনো দিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোগীদের উপড় প্রয়োগ না করলে তো ওষুধ কাজ করছে কিনা বুঝতে পারব না। তাই সবাইকে ওষুধ দিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এখন এত চাপ সামলানো যাচ্ছে না।  

Dhaka Post

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার রায় অজয় বলেন, তদন্ত কমিটি করে দেওয়ার পর তারা তদন্ত শুরু করেছে। তদন্ত শেষে বুঝা যাবে এ চিকিৎসায় আসলে লোকজন কোনো উপকার পাচ্ছে কিনা। তবে যে পদ্ধতিতে চিকিৎসা দিচ্ছেন এটি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। না হলে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও তিনি জানান।

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় বলেন, তার চিকিৎসার ঘটনাটি শুনলেও এর কোনো সাইন্টিফিক ভিত্তি নেই। বাংলাদেশে পানি পড়া নিতেও লোকজন ভিড় করে। গায়ে পানি ছিটিয়ে দিলেও রোগ ভালো হয় এমনটিও আমরা শুনেছি। এসব বিষয় জানার পর একটি তদন্ত কমিটি করে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে বলা হয়েছে। তারাই তদন্ত রির্পোট জমা দিবেন। তদন্ত রিপোর্ট পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  

নিয়াজ আহমেদ সিপন/আরআই

Link copied