একসঙ্গে বেড়াত তারা, একসঙ্গেই মৃত্যু

স্কুলে না গিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিল তিন বন্ধু। তাদের মোটরসাইকেলের গতি ছিল ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার। মোটরসাইকেলটি ঘাটাইল-ধলাপাড়া সড়কের সরিষাআটার চেয়ারম্যান বাড়ি মোড় এলাকায় এসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় তিন বন্ধু।
সোমবার (৮ নভেম্বর) সকালে উপজেলার ধলাপাড়ার সরিষাআটা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। একসঙ্গে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিকেলে জানাজা শেষে নিহত তিনজনের মরদেহ নিজ নিজ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন- উপজেলার ধলাপাড়া ইউনিয়নের বড় মেধার ঝাইপাটা গ্রামের মৃত সমির উদ্দিনের ছেলে শরীফ, একই গ্রামের শাহজালালের ছেলে আবু বক্কর ও মৃত রমজান আলীর ছেলে শাহীন।
তারা তিনজন ধলাপাড়া এসইউপি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির মানবিক শাখার শিক্ষার্থী ছিল।
জানা গেছে, নিহত তিনজনের মধ্যে শরীফ তার পরিবারের কাছে একটি মোটরসাইকেল চেয়েছিল। পরিবার মোটরসাইকেল কিনে দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় সে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। পরবর্তীতে তার মা ও চাচারা মিলে তাকে একটি আরটিআর মোটরসাইকেল কিনে দেন। ওই মোটরসাইকেলই কাল হয় স্কুলছাত্র শরীফের। শরীফের বাবাও সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন।
সোমবার পরিবারের দেওয়া মোটরসাইকেলে আরও দুই বন্ধুকে নিয়ে ঘুরতে যায় শরীফ। মোটরসাইকেলটি অতিরিক্ত গতিতে চালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে তিনজনের মৃত্যু হয়।
ধলাপাড়া এসইউপি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। দুর্ঘটনায় একই গ্রামের তিনজন শিক্ষার্থী মারা গেছে। এ ঘটনা দেখে অন্য যারা মোটরসাইকেল চালায় তারাও সচেতন হবে। এভাবে আর কোনো সহপাঠীকে তারা হারাতে চায় না।
ধলাপাড়া এসইউপি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামছুল হক বলেন, নিহতরা একই গ্রামের তিন বন্ধু। বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। করোনাকালে পড়াশোনা বন্ধ ছিল। তারপরও তারা পড়াশোনায় মনোযোগী ছিল না। তবে তারা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসতো। মোটরসাইকেল নিয়েই তারা একসঙ্গে ঘুরাঘুরি করতো। তাদের একজন বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল কিনে না দেওয়ায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল বলে জেনেছি। পরবর্তীতে বাধ্য হয়ে তার পরিবার মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়ে আসা বাদ দিয়ে মোটরসাইকেল ঘুরাফেরা করা এসব ছেলেদের বিষয় নিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করা হয়েছে। সন্তানরা বাবা-মায়ের কথা শোনে না। ফলে এমন পরিণতি হচ্ছে।
ধলাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. এজাহারুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, বিকেলে জানাজা শেষে নিহত তিনজনের মরদেহ গ্রামের নিজ নিজ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। নিহত শরীফের বাবাও সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিল। তার মা ও চাচারা মিলে শরীফকে মোটরসাইকেলটি কিনে দিয়েছিল। সড়কে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শরীফসহ তিনজন মারা যায়। তারা একই গ্রামের এবং একই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতো।
অভিজিৎ ঘোষ/আরএআর