এমন মৃত্যু কীভাবে মেনে নেব?

মেয়ে সানজিদা আক্তার ও ভাগনি ফাহমিদা আক্তারকে নিয়ে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন আরিফুর রহমান। পথিমধ্যে মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে যায় দুই বোন। এ সময় একটি দ্রুতগতির ট্রাক তাদের চাপা দিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরিফুর রহমান বলেন, আমার ভাগনি তার নানুর বাড়িতে আর আসতে পারবে না। দাদার বাড়িতে আর খেলা করবে না আমার মেয়ে। চোখের পলকেই সব শেষ হয়ে গেলো। চোখের সামনে এ ভয়ংকর মৃত্যু কীভাবে মেনে নেব?
এক পর্যায়ে তিনি রাস্তার ওপরই মরদেহগুলোর পাশে বসে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে নির্বাক হয়ে বসেছিলেন। পরে পরিবারের লোকজন এসে তাকে ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে যায়।
নিহত সানজিদার মামা তারেক রহমান ঘটনাস্থলে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি উচ্চ স্বরে কান্না করতে করতে বলেন, ও আল্লাহ রে আমার ভাগনিকে ফিরিয়ে দাও। আমার ভাগনি আমার কলিজা। আমার ভাগনি কই? আল্লাহ আমার ভাগনি রে কেন নিয়ে গেলে?
শনিবার (১৩ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে লক্ষ্মীপুর-রামগঞ্জ সড়কের সদর উপজেলার পালেরহাট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উত্তেজিত জনতা আধা ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পৌঁছে অবরোধ তুলে দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
নিহত সানজিদা রায়পুর উপজেলার কেরোয়া ইউনিয়নের কেরোয়া গ্রামের বাসিন্দা আরিফুর রহমানের মেয়ে ও ফাহমিদা আলমগীর হোসেনের মেয়ে। সানজিদা লক্ষ্মীপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ও ফাহমিদা ঢাকার সেগুনবাগিচা গার্লস হাই স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী। দুজনে সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো বোন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানিয়েছে, আরিফুর রহমান তার পরিবার নিয়ে লক্ষ্মীপুর পৌর শহরে ভাড়া বাসায় থাকেন। তার মেয়ে সানজিদা ও ভাগনি ফাহমিদাকে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে তিনি কেরোয়া গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তারা দুজন মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যান। এ সময় রামগঞ্জ থেকে আসা দ্রুতগতির একটি ট্রাক তাদের চাপা দিয়ে চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলে তারা মারা যায়। খবর পেয়ে একই সড়কের আটিয়াবাজার এলাকায় জনতা ট্রাকটি আটক করে। এ সময় চালককে আটক করে পুলিশে সৌপর্দ করে স্থানীয় জনতা।
পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ফাহমিদার রোববার (১৪ নভেম্বর) থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। বিকেলে তার ঢাকায় পোঁছার কথা ছিল। কিন্তু ভাগ্য তাকে যেতে দেয়নি। সড়ক দুর্ঘটনায় ফাহমিদা ও তার মামাতো বোন সানজিদার মৃত্যু হয়েছে। তার এসএসসি পরীক্ষাতেও বসা হলো।
লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল হান্নান বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবরোধ তুলে দেওয়া হয়েছে। পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মরদেহ দাফনের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
হাসান মাহমুদ শাকিল/এসপি