ইউপি সদস্য হত্যা, আসামির দাবি ব্যক্তিগত বিরোধ

গাইবান্ধার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচিত সদস্য আব্দুর রউফ মিয়া হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ব্যক্তিগত বিরোধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১৩-এর অধিনায়ক কমান্ডার রেজা আহমেদ ফেরদৌস।
গ্রেফতার আসামি আরিফ মিয়ার উদ্ধৃতি দিয়ে ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক বলেন, হত্যাকারীর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ইউপি সদস্যের সঙ্গে পারিবারিক ইস্যুতে এ ঘটনা ঘটেছে। আসামি আরিফ মিয়ার দুজন স্ত্রী ছিলেন। যারা তাকে ছেড়ে চলে যান। এর পেছনে ইউপি সদস্য আব্দুর রউফের হস্তক্ষেপ ছিল। আসামি আরিফ মিয়ার দাবি অনুযায়ী এই বিরোধের কারণে হত্যার ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। তবে এর পেছনে আর অন্য কোনো মোটিভ রয়েছে কি না, তা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যেতে পারে।
রোববার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের রংপুর সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান রেজা আহমেদ ফেরদৌস।
নিহত ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি একাধিবার নির্বাচিত হয়েছেন। এলাকাবাসীর দাবি, তাকে কোনো পক্ষের ইন্ধনে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে এই অধিনায়ক বলেন, সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত বা অপরাধী, তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনাটাই আমাদের মুখ্য বিষয়। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। তবে ঘটনার নেপথ্যে যেসব কথা শোনা যাচ্ছে, তা গভীরতর তদন্তের বিষয়।
ঘটনার আগের দিন আরিফ মিয়া স্থানীয় একটি ক্লাবে আব্দুর রউফসহ আর দুজনের ক্ষতি করবেন বলে আভাস দিয়েছিলেন। আরিফ মিয়া সরকারি চাকরি করেন এবং তিনি একসময় সরকারি দলের একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অন্যদিকে হত্যাকাণ্ডের শিকার ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। এ কারণে এই হত্যার ঘটনায় কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বা ইন্ধন র্যাব পেয়েছে কি না, জানতে চাইলে রেজা আহমেদ বলেন, অপরাধীর পরিচয় অপরাধী। আমাদের কাছে তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় মুখ্য নয়। তবে সবকিছুই তদন্ত ও সময় সাপেক্ষে বলা যাবে।
আরিফ হত্যাকাণ্ডে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ঘটনার দিন রাতে আব্দুর রউফ তার বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে হাটলক্ষ্মীপুর বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে মোটরসাইকেল থেকে নেমে হেঁটে ব্রিজ পার হতে গেলে আগে থেকে ওত পেতে থাকা আরিফ ও তার সঙ্গীরা তার পথ রোধ করে। এ সময় তারা আব্দুর রউফকে লক্ষ্য করে হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে। প্রথম আঘাতের পর তিনি মাটিতে পড়ে গেলে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকে। আব্দুর রউফের চিৎকার করলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় মামলা হলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পঞ্চগড় জেলার বোদা থানার পাঁচপীর এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামি আরিফ মিয়াকে (৩৩) গ্রেফতার করে র্যাব। এ ঘটনায় আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা ও জড়িত অন্যদেরও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়।
এদিকে গাইবান্ধায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত আরিফ মিয়া খাদ্য বিভাগের নৈশপ্রহরী। উচ্ছৃঙ্খল আচরণের কারণে সম্প্রতি তাকে গাইবান্ধা থেকে দিনাজপুরে বদলি করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে তাকে যোগদান করতে দেননি অন্য কর্মচারীরা। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এনএ