চারগুণ বেশি ভোটে জিতেও বসে নেই তৃতীয় লিঙ্গের কুলসুম

‘তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা অনেক পেছনে পড়ে আছে। তাদেরকে সামনের দিকে এগোতে হবে। পাঁচ বছর আগে পরিকল্পনা করি নির্বাচনে দাঁড়াব। সেই পরিকল্পনা থেকেই মানুষের সুখে-দুঃখে সব সময় পাশে থেকেছি। এবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছি। এখন মানুষকে আরও বেশি সেবা দিতে হবে।’
এভাবেই ঢাকা পোস্টের কাছে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য তৃতীয় লিঙ্গের কুলসুম খাতুন।
আগামী দিনের পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, একটাই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে সেবা দেওয়া। কোনো লোভ করা যাবে না। গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের তিনটি কেন্দ্রেই আমি প্রথম হয়েছি। ৪ হাজার ২০০ ভোট পেয়েছি আমি। এত বেশি ভোট পেয়ে কেউ কখনো পাস করেনি। আমি সারাজীবন মানুষের সেবা করে যেতে চাই। জেতার পর বাড়ি বসে থাকলে হবে না। তাই সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে দোয়া নিচ্ছি।

তৃতীয় লিঙ্গের কুলসুম খাতুন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ওয়ারিয়া গ্রামের বাসিন্দা। গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। এতে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন কুলসুম।
সাতক্ষীরা জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সূর্যমুখী ফুল প্রতীক নিয়ে আছিয়া খাতুন পেয়েছেন ৫২০ ভোট, বক প্রতীক নিয়ে নিগার সুলতানা ৯৫৭ ভোট, কলম প্রতীক নিয়ে শিরিনা খাতুন ৪০৭ ভোট ও মাইক প্রতীক নিয়ে কুলসুম খাতুন পেয়েছেন ৪ হাজার ৬৮ ভোট।
নির্বাচনে জয়লাভ করার পর কুলসুম খাতুন এখন ভোটারদের বাড়িতে বাড়িতে ঘুরছেন। ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। দোয়া প্রার্থনা করে বিপদে আপদে পাশে থাকার কথাও জানাচ্ছেন তিনি। বিজয়ী প্রার্থীকে বাড়িতে পেয়ে খুশি এলাকার মানুষও।
ঝাউডাঙ্গা বাজারের চা বিক্রেতা অজিয়ার রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বামী-সংসার নেই কুলসুমের। তিনি সব সময় মানুষের সেবা করতে চান। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হলেও সবার সঙ্গে মিলেমিশে চলাফেরা করেন। এলাকার মানুষও তাকে খুব ভালোবাসে। সে কারণে চারগুণ বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছেন।

কুলসুম বেগমের এত জনপ্রিয়তার রহস্য জানালেন ওই এলাকার ভোটার ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, উনি একজন সৎ প্রার্থী। সব দিক দিয়েই পারফেক্ট। তার দিক-নির্দেশনা অনেক সুন্দর ছিল। যা অন্যদের থেকে ব্যতিক্রম। ব্যবহারও খুব ভালো। ব্যবহার গুণে তার এত জনপ্রিয়তা। ফলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে এখন তিনি যেভাবে মানুষের পাশে থাকছেন সেভাবেই যেন মানুষের পাশে থেকে সেবা দেওয়া অব্যাহত রাখেন। এছাড়া আমাদের ভোটারদের আর কিছু চাওয়ার নেই।
সাতক্ষীরা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নাজমুল কবীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নারী সদস্য পদে কুলসুম বেগমকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। নিকটতম প্রার্থীর থেকে চারগুণ বেশি ভোট পেয়ে তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন।
আকরামুল ইসলাম/আরএআর