জয়পুরহাটে জামাইদের নিয়ে বসেছে নবান্নের মাছের মেলা

‘কাটিয়া আনোরে ধান, আগোনে হবে নবান, নয়ালী ধানের ক্ষীর পিঠা ও পাকান’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে জয়পুরহাটে গত মঙ্গলবার উদযাপিত হয়েছে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব।
দুদিন পর বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) ভোরে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে জয়পুরহাটের কালাইয়ের পাঁচশিরা বাজারে বসে নানা প্রজাতির মাছের মেলা। এদিন ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত নানা বয়সী মানুষের ঢল নেমেছিল মেলায়। প্রতিবছর অগ্রাহয়ণের প্রথম বৃহস্পতিবার এ মেলার আয়োজন করা হয়।
মেলায় রুই, কাতলা, চিতল, বাগাড়, বোয়াল, বিগ্রেড, সিলভারকার্পসহ নানা প্রজাতির মাছ এনেছিল বিক্রেতারা। ভোর থেকেই এসব মাছ নিয়ে সারি বেধে দোকান নিয়ে বসে মাছ বিক্রেতারা। মাছ ব্যবসায়ীরা দাম হাঁকছেন আর ক্রেতারা দরদাম করছেন। ৩ কেজি থেকে শুরু করে ৩৫ কেজি ওজনের মাছ উঠেছে মেলায়।
লোকজনও ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে কিনেছেন মাছ। অনেকেই আবার মেলা দেখতে এসেছেন ।

মেলায় অংশ নেন কালাই উপজেলার মাত্রাই, উদয়পুর, পুনট, জিন্দারপুর, আহম্মেদাবাদ ইউনিয়ন ও কালাই পৌরসভার শতাধিক গ্রাম-মহল্লার মানুষ। মেলাকে কেন্দ্র করে মেয়ে-জামাইসহ স্বজনদের আগে থেকেই দাওয়াত দেওয়া হয়।
মেলায় মাছ কিনতে আসা তরিকুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মাছের দাম একটু বেশি। তবে যাই হোক না কেন এই মেলা থেকে ৩৫ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ ৪২ হাজার টাকায় কিনে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।

হাসান নামের এক জামাই বলেন, মেলায় বড় বড় মাছ দেখে অনেক ভালো লেগেছে। তাই দেখে শুনে ২০ কেজি ওজনের একটি বিগ্রেড মাছ কিনেছি।
মাছ বিক্রেতা রেজাউল ইসলাম বলেন, এই মেলার জন্য এলাকার বিভিন্ন পুকুর ও নদী থেকে মাছ সংগ্রহ করে নিয়ে আসি। মেলাকে লক্ষ্য করে চলে মাছ ধরার উৎসব। এবার ৩৫ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ নিয়ে এসেছিলাম। বগুড়ার আদমদিঘী থেকে আসা একজনের কাছে ৪২ হাজার টাকায় মাছটি বিক্রি করেছি।

আরেক মাছ বিক্রেতা নাইম বলেন, আমি প্রতিবছরই এ মেলায় মাছ নিয়ে আসি। বাজারের তুলনায় মেলায় মাছের দাম বেশি হলেও সবাই আনন্দের সঙ্গে কেনেন।
কালাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এই মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী এবং মাছ চাষিরা বিভিন্ন এলাকা থেকে সপ্তাহ খানেক ধরে বড় বড় মাছ সংগ্রহ করেন। মেলায় কেউ যেন বিষযুক্ত মাছ বিক্রি করতে না পারে সেদিকে আমাদের কঠোর নজরদারি থাকে।
কালাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন বলেন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হওয়ায় নবান্নের এই মেলায় কেনাকাটা করতে আসেন সব সম্প্রদায়ের মানুষ।
চম্পক কুমার/আরআই