পাউবোর জায়গায় স্থাপনা নির্মাণকারী পেলেন নৌকা প্রতীক

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধিগ্রহণকৃত জায়গা দখল করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ার কাজ করছেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল। তিস্তা ব্যারাজের পাশে ফ্লাড বাইপাস সড়কের কোল ঘেঁষে প্রায় ৩০ শতাংশ সরকারি জমির ওপর পাকা স্থাপনা নির্মাণ করছেন তিনি।
আগামী ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গড্ডিমারী ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক পেয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে নৌকায় জন্য গণসংযোগ করছেন ও ভোট চাইছেন। কিন্তু তার এই কর্মকাণ্ডে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার তৈরি হয়। তবে প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে তাকে কেউ কিছু বলতে চান না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, পাউবোর জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করতে পাউবো নীলফামারী ডালিয়ায় কর্মরত সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুর রব হাতীবান্ধা থানায় গত সেপ্টেম্বর মাসে একটি অভিযোগ দিলেও সেটির ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ। তবে এ দখলের এই ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি জিডি করা হয়েছে মাত্র।
স্থানীয়রা বলছেন, অভিযুক্ত আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল লালমনিরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেনের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেন কলেজের অধ্যক্ষ। এ ছাড়া তিনি হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের ঘোষিত কমিটির সদস্য।

হাতীবান্ধা থানায় দেওয়া পাউবোর অভিযোগ থেকে জানা গেছে, তিস্তা ব্যারাজ এলাকার ৫ নং চেকপোস্টের বিপরীত পার্শ্বে ফ্লাডবাইপাসের ১০০ গজ দূরে সরকারি জায়গা জোর করে দখল করে স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু করেন আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল। কাজ শুরুর ঘটনা জানার পরপরই তাকে নির্মাণকাজ বন্ধ করার জন্য মৌখিকভাবে বলা হলেও কাজ বন্ধ হয়নি। গত ১১ ও ২৫ আগস্ট পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. রাশেদীন অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে পরপর দুটি নোটিশ দেন। এতেও কাজ না হলে হাতীবান্ধা থানায় গত ১ সেপ্টেম্বর একটি লিখিত অভিযোগ করেন পাউবোর সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুর রউফ।
নীলফামারী ডালিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদৌলা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তিতে ফ্লাডবাইপাস তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য লালমনিরহাট জেলা প্রশাসককে গত ২ সেপ্টেম্বর একটি চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেন। সেই চিঠিরও কোনো সুরাহা করেনি লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুর রব বলেন, গত ১ সেপ্টেম্বর থানায় লিখিত অভিযোগ করা হলেও পুলিশ অজ্ঞাত কারণে এখনো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পুলিশের সহায়তা চাওয়া হলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এ কারণে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
তিস্তা ব্যারাজ দোয়ানী এলাকায় পাউবোর জায়গায় অস্থায়ীভাবে বসবাসকারীরা অভিযোগ করে জানান, দীর্ঘদিন ধরে পাউবোর জায়গায় অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে বসবাস করে আসছেন তারা। তবে তারা পাউবোর জায়গায় স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণের সাহস পাননি। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল রাতারাতি পাউবোর জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। পাউবো কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারছে না।

পাউবোর সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুর রব জানান, তিস্তা ব্যারেজ ও ফ্লাড বাইপাস সড়কের আশপাশে কোনো ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি নেই। পাউবোর জায়গায় ভূমিহীনরা অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তারা কেউ স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবেন না।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উচ্চ আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এটা বলেই তিনি ফোন কেটে দেন।
হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল আলম জানান, দখলের এই ঘটনায় দোয়ানী পুলিশের বিশেষ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই আবু বক্কর সিদ্দিক গত ১৩ সেপ্টেম্বর তারিখে হাতীবান্ধা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ডায়েরির বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ওসি আরও বলেন, আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল তার কাছে কাগজপত্র আছে বলে দাবি করলেও তা তিনি আজও দেখাতে পারেননি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা বলেন, আমরা অবৈধ দখল উচ্ছেদের জন্য মাইকিং ছাড়া মৌখিক ও লিখিতভাবে দখলদারেকে জানিয়েছি। এ ছাড়া হাতীবান্ধা থানায় লিখিত অভিযোগ এবং লালমনিরহাট জেলা প্রশাসককে দখলদার উচ্ছেদের জন্য চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যেকোনো মূল্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবেই।
যোগাযোগ করা হলে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য অনুরোধ করে একটি চিঠি পাওয়া গেছে। চিঠির আলোকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।
নিয়াজ আহমেদ সিপন/এনএ