৩ মাসের ছুটিতে এসে লাশ হলেন চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন

মাত্র এইচএসসি পাস করে পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমিয়েছিলেন গুলিতে নিহত চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন আলম। তিন মাসের ছুটি নিয়ে দুই মাস আগে বাড়িতে এসেছিলেন তিনি।
ইয়াসিন আলম ভাড়ারা গ্রামের মোজাম্মেল খার ছেলে ও ভাড়ারা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী সুলতান মাহমুদের আপন চাচাতো ভাই।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দোগাছি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে এইচএসসি পাস করার পর ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান। এর দুই বছর আগে পারিবারিক সম্মতিতে একই ইউনিয়নের চিথুলিয়া গ্রামের নিয়ামত আলীর মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। সিঙ্গাপুরে একটি কোম্পানিতে সুপারভাইজার পদে ছিলেন তিনি। চলতি বছরের অক্টোবর মাসের শুরুতে সেখান থেকে ছুটি নিয়ে দেশে আসেন।
এদিকে সকালে নিহতের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছালে হাজার হাজার মানুষ একনজর দেখতে ভিড় করেন। এলাকাবাসী ও স্বজনদের কান্নায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
নিহতের স্ত্রী নাসরিন পারভিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার স্বামী দুই মাস আগে ছুটি নিয়ে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে আসে। তার কোনো দিন কারও সঙ্গে ঝামেলা হয়নি। বর্তমান চেয়ারম্যান সাঈদের আগে থেকে টার্গেট ছিল আমার স্বামীকে হত্যা করার। আমি এতিম হয়ে গেলাম।
নিহতের বাবা মোজাম্মেল হক বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খান বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল। এলাকায় পোস্টার ছেঁড়া থেকে শুরু করে প্রচারণা মাইক ও অফিস ভাঙচুর, প্রচারণায় বাধা, কর্মীদের হুমকি ও আমাকেসহ আমার পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। আমার ছেলেকে হত্যার মাধ্যমে তার মিশন বাস্তবায়ন করেছে। ছেলে হত্যাকারীদের ফাঁসি চান তিনি।
নিহতের আপন চাচাতো ভাই বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতান মাহমুদ বলেন, এর আগেও বর্তমান চেয়ারম্যান ৪৭টি খুন করেছে। তার কোনো বিচার হয়নি। ২৫ বছরের চেয়ারম্যান এবার ভরাডুবির শঙ্কায় এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছে।
সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ঘটনায় দুজনকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে রোববার সকালে পুলিশি নিরাপত্তায় স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, শনিবার সকালে ভাড়ারা ইউনিয়নের চারা বটতলার ইন্দারা মোড় কালুরপাড়া এলাকায় সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবু সাঈদ খান ও তার লোকজন এবং ভাড়ারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, বিদ্রোহী প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের সুলতান মাহমুদের লোকজনও বের হয়।
বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী সুলতান মাহমুদের আপন চাচাতো ভাই আনারস প্রতীকের ইয়াছিন আলম জড়ো হলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
এ সময় উভয় পক্ষের ১২ জন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াছিন আলম নাটোরের বনপাড়ায় মারা যান। এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশন থেকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন স্থগিতও করা হয়েছে। নিহতের বাবা বাদী হয়ে ৩৪ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ৪০-৪৫ জনের নামে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছে। আজ দুপুর আড়াইটার দিকে ভাড়ারা ইউনিয়নের আওরঙ্গাবাদ হাফিজিয়া মাদরাসা মাঠে জানাজা শেষে দাফন করা হবে।
রাকিব হাসনাত/এসপি