ছাড়পত্র ছাড়াই চলছিল মেয়রের সেই কারখানা

বগুড়ার সান্তাহার পৌরসভার হবির মোড় এলাকায় মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে বিআইআরএস নামের একটি প্লাস্টিক কারাখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়েছে পাঁচজন। নিহতদের পরিচয় শনাক্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 

গত এক বছর ধরে চলছে কারখানাটি। তবে পরিবেশ অধিদফতর থেকে কোনো ছাড়পত্র নেই বলে জানা গেছে। ছাড়পত্র ছাড়াই এতদিন কারখানাটি কীভাবে চলছিল তা জানতে চাওয়া হয় পরিবেশ অধিদফতরের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালকের কাছে।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতর রাজশাহী বিভাগের পরিচালক সুফিয়া নাজিম বলেন, সান্তাহারের বিআইআরএস প্লাস্টিক কারখানা পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছিল। কারখানাটির কোনো ছাড়পত্র নেই।

ছাড়পত্র ছাড়াই গত এক বছর ধরে কীভাবে কারখানাটি চলছিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেখুন আমরা একটি অবস্থানগত ছাড়পত্র দিয়েছিলাম, যাতে সেখানে কারখানা করা যায়। কিন্তু কোনো ধরনের পণ্য উৎপাদনের ছাড়পত্র আমরা দেয়নি। তবুও কারখানাটি চলছিল। যা উচিত নয়।

তিনি আরেও বলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি বেলার আবেদনের পর উচ্চ আদালত কারখানাটিকে ওয়ান টাইম প্লেট উৎপাদন বন্ধ করার আদেশ দিয়েছিল। কিন্তু তারা উৎপাদন বন্ধ করেনি। আইন অনুযায়ী আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারখানার মালিক সান্তাহার পৌরসভার মেয়র মো. তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টো বলেন, ছাড়পত্র নেওয়ার জন্য টাকা জমা দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু টাকা নেয়নি দফতর। অনেক কারাখানাই চলছে নানাভাবে। মাত্র এক বছর ধরে কারাখানায় উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছি। অন্যন্যা সব কাগজপত্র আছে। তবে ছাড়পত্রের কাজটিও খুব দ্রুত করে ফেলতাম। তাছাড়া অন্য সব নিয়ম মেনেই কারখানা পরিচালনা করে আসছি।

তিনি আরও বলেন, অগ্নিকাণ্ডে পাঁচজন শ্রমিক মারা গেছেন। কারাখানার কাঁচামাল, যন্ত্রপাতিসহ অনেক কিছু পুড়ে গেছে। এতে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। 

নওগাঁ ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক একেএম মোর্শেদ বলেন, ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট বিকেল ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে তা বলা সম্ভব না। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ বা শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে। তবে তদন্তের পর জানা যাবে প্রকৃত কারণ। 

আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শ্রাবণী রায় বলেন, এটি একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা। পাঁচটি তাজা প্রাণ ঝরে গেছে। জেলা প্রশাসক (ডিসি) স্যার কারখানাটি পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাতদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। 

বগুড়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. জিয়াউল বলেন, আমি কারখানাটি পরিদর্শন করেছি। পাঁচজন মারা গেছে আগুনে পুড়ে। কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাতদিনের মধ্যে তদন্তপ্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্তপ্রতিবেদনের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মো. দেলোয়ার হোসেন/আরআই