দাদার মৃত্যুর ১৪ দিন পর নাতির মৃত্যু, শোকে স্তব্ধ মা

সীমা বেগম (২৮)। শ্বশুর ও একমাত্র ছেলেকে নিয়ে মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বালিগাও গ্রামে বসবাস করতেন। স্বামী মিজানুর রহমান তিন বছর ধরে ব্রুনাই প্রবাসী। ১৪ দিন আগে হঠাৎ করে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান শ্বশুর আনোয়ার হোসেন। শ্বশুরের মৃত্যুর পর একমাত্র ছেলে সৌরভকে নিয়ে নিজ বাড়িতে বসবাস করছিলেন। শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেল ছেলেও।
সরেজমিনে শনিবার বিকেলে দেখা গেছে, সৌরভের মা সীমা বেগম নিজ ঘরে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে রয়েছেন। যখন জ্ঞান ফিরে আসছে তখনই আবার আহাজারি করছেন। আহাজারির মধ্যেই বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি।
জানা গেছে, শনিবার সকাল ১০টার দিকে বাড়ির সামনে রাখা একটি মাহেন্দ্র গাড়িতে খেলা করছিল সৌরভসহ তিন শিশু। মাহেন্দ্রর চালক না দেখে তিন শিশুকে নিয়েই চলে যায় প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার শুয়াপাড়ায়। সেখানে মাহেন্দ্র থেকে ছিটকে পরে সৌরভ (৭) মারা যায়।
এলাকাবাসী জানায়, সকাল ১০টার দিকে অজ্ঞাত বালুভর্তি এক মাহেদ্র সৌরভদের বাড়ির সামনে রাখা ছিল। এ সময় গাড়িতে উঠে খেলা করছিল সৌরভসহ তিন শিশু। চালক না দেখে তাদের গাড়িতে নিয়ে চলে যায়। পরে শিশুদের দেখতে পেয়ে তিনি তাদের নিজের পাশের সিটে বসিয়ে গাড়ি চালাতে থাকেন। সদর উপজেলার শুয়াপাড়ায় গর্তের মধ্যে গাড়ির চাকা আটকে যায়। ঝাঁকুনিতে মাহেন্দ্র থেকে ছিটকে পড়ে ওই মাহেন্দর চাকায় পিষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হয় সৌরভ।
পরে তাকে উদ্ধার করে টঙ্গিবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। ঢাকা নেওয়ার পথে সে মারা যায়।
সৌরভ বালিগাও গ্রামের ব্রুনাই প্রবাসী মিজানুর শেখের ছেলে এবং বালিগাও মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র।
স্থানীয় ইউপি সদস্য দ্বীন ইসলাম শেখ বলেন, সকালে সৌরভসহ তিন শিশু আমাদের বাড়ির পাশে রাখা বালু ভর্তি মাহেন্দ্রতে খেলা করছিল। পরে আমরা খবর পাই সৌরভ সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে টঙ্গিবাড়ী হাসপাতালে আছে। আমরা হাসপাতালে গিয়ে দেখি এক অটো চালক ওকেসহ আরও দুই শিশুকে নিয়ে আসছে। ওর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ওকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পথে সৌরভ মারা যায়। আমরা ঘাতক মাহেন্দ্র ও তার চালককে আটক করতে পারিনি।
টঙ্গিবাড়ী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা সোয়েব আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের বাড়ি গিয়েছে। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকায় সুরতহাল করে শিশুটিকে স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ব.ম শামীম/এসপি