৭ দিন কলাগাছের পাতা খেয়ে ছিলাম
২৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০২:৩২ পিএম

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম
‘আমরা সাত দিন কেউ খাইনি। কলাগাছের পাতা ও ল্যাট্রিনের পানি খেয়েছি। তিন দিন খাঁড়া (দাঁড়ানো) ছিলাম। ভাত-পানি কিছুই পাইনি। শেষে কলার গাছ চিবিয়ে রস খেয়েছি।’ কথাগুলো বলছিলেন একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম।
বয়সের ভারে শরীর কাবু হলেও এখনও মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি তাকে দাগ কাটে। একাত্তরে বাঙালির মুক্তির লড়াইয়ে শামিল হয়েছিলেন তিনি। দেশের মানুষকে মুক্ত করার জন্য ৯ মাস শত্রুর সঙ্গে লড়াই করে বিজয় এনেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম।
মুক্তিযুদ্ধের সময় আবুল হাসেমের বয়স মাত্র ২০ বছর। মাসে দেড়শ টাকা বেতনে আনসারে যুক্ত হয়েছেন সবেমাত্র। সুনামগঞ্জ আনসার ক্যাম্পে পোস্টিং ছিলো তার। তখনই শুরু হলো মহান মুক্তিযুদ্ধ।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ
তিনি বলেন, ‘দেশের মা-বোনের জন্যে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছি।’ আমার স্ত্রী তখন বলেছিলেন, দেশের জন্যে জীবন দিলে ভালা। ছোট দুই ছেলেকে রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। স্ত্রী-ছেলের জন্যে মন কাঁদলেও দেশমাতৃকার তুলনায় তা কিছুই না। দেশ আমার পরিবার মনে হয়েছে। তাদের মুক্ত করার প্রতিজ্ঞা নিয়েছিলাম। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে সে প্রতিজ্ঞা আমি রেখেছি।’
আবুল হাসেম বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আগেই বলেছেন, ‘যার যা আছে তা নিয়ে যুদ্ধে যাবার জন্য।’ আমরাও যা পেয়েছি তা নিয়ে যুদ্ধে গিয়েছি। ভারত থেকে রাইফল পেয়েছি। ডলুরা শহীদ স্মৃতিসৌধের পাশে দৃষ্টিনন্দন মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যের পাশে দাঁড়িয়ে ঢাকা পোস্টের এ প্রতিবেদকের কাছে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম।
তিনি বলেন, একাত্তর সালে আমরা একসঙ্গে রুখে দাঁড়িয়ে ছিলাম পাকিস্তানি হায়েনাদের বিরুদ্ধে। কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, জনতা সবাই এক কাতারে এসে অস্ত্র হাতে শামিল হয়েছিল। অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করতে করতে প্রাণ দিচ্ছিলেন সহযোদ্ধারা। দাফন করার নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় একসঙ্গেও কবর দিতে হয়েছে অনেককে। আবার অনেক ক্ষেত্রে লাশ পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছিল।
এই অগ্নিঝরা একাত্তরে আমাদের সঙ্গে একজন শহীদের লাশ মর্যাদার সঙ্গে দাফন করার জন্য এগিয়ে আসেন। তিনি আবুল কালাম ওরফে মধু মিয়া। যুদ্ধে শহীদদের জন্য তিনি কবরের জায়গা খুঁজতে থাকেন। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নিজের দখলে থাকা সরকারি খাস জায়াগাকেই উপযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করেন তিনি।
রণাঙ্গনের স্মৃতিচারণ
যুদ্ধের স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ১৮ জুলাই সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন জামালগঞ্জের কামলাবাজ গ্রামের মন্তাজ মিয়া। আনসার বাহিনীর এই তরুণ দেশমাতৃকাকে শত্রুমুক্ত করার অদম্য বাসনায় যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। বালাট সাব-সেক্টরের এই যোদ্ধা মৃত্যুর আগে মীরেরচর গ্রামের কাঁচা মিয়াকে নিজের পাঞ্জাবি ও চশমা দিয়ে বলেছিলেন, ‘যুদ্ধে যদি আমি মারা যাই তবে বৃদ্ধ মাকে এই দুটো জিনিস দিয়ে দেবেন।’
এর কিছুদিন পরেই সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন মন্তাজ মিয়া। আর শহীদ মন্তাজ মিয়াকে দাফন করেই গোড়াপত্তন হয় ডলুরা শহীদ স্মৃতিসৌধের। পরে মধু মিয়া শহীদ মন্তাজের খবর জানাতে ছুটে যান তার সঙ্গীসাথি নিয়ে।
সীমান্তঘেঁষা এই ডলুরা স্মৃতিসৌধে ঘুমিয়ে আছেন সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হওয়া ৪৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। পরে ২০০৪ সালে মধু মিয়া মারা গেলে তাকেও সমাহিত করা হয় এই সমাধিতে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাসেমের ৪ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে। ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন অনেক আগে। দেশ স্বাধীনের পর তিনি যুক্ত হন কৃষিকাজে। নিজের কিছু জমিতে চাষাবাদ করেই জীবিকা নির্বাহ করেছেন। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ডলুরা গ্রামের বাসিন্দা এই বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাসিম যখন মুক্তিসংগ্রামে যোগ দেন তখন তিনি ১৫০ টাকা বেতনে আনসারে চাকরি করতেন।
কীভাবে যুদ্ধে গেলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুদ্ধে যখন গিয়েছি তখন ২ ছেলে অনেক ছোট। সত্তরের নির্বাচনের পরে শেখ (শেখ মুজিবুর রাহমান) সাহেবকে ধরে নিয়ে গেছে। তখন মেজর মোতালিব আমাদের সব আনসারদের ডেকে দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেছেন। তিনি বললেন, দেশকে স্বাধীন করতে হবে। এজন্য যুদ্ধ করতে হবে। আমিও সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলাম।
নিজে অনেক সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাসেম। এসবের স্মৃতি তেমন মনে নেই তার। তিনি বলেন, সুরমা ইউনিয়নের বৈষারপার যুদ্ধে আমাদের সঙ্গের ৭ জন মারা যান। মুখোমুখি সে যুদ্ধে আমাদের এক কমান্ডারও মারা যান। পরে আমরা পিছে ব্যাক করেছি। সে যুদ্ধে আমরা প্রায় ১০০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম।
ডলুরা সীমান্ত এলাকা দেখিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাসেম বলেন, এখানে শরণার্থীদের ক্যাম্প ছিলো। ভারত সরকার তাদের থাকার মতো ঘর তৈরি করে দিয়েছিল। শরণার্থীদের খাবার জন্য রেশন পাঠাতো ভারত সরকার। এই ক্যাম্পের পাশেই আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিল।
এই ডলুরা সীমান্তে টিলার ওপরে আমাদের ক্যাম্প ছিলো। ক্যাম্প থেকেই আমাদের খাবার দেওয়া হতো। আমরা গ্রামে গ্রামে থাকতাম। এই এলাকায় কোনো মানুষ ছিলো না। সবাই শরণার্থী ক্যাম্পে চলে গেছে। বাড়িঘর খালি পড়ে রয়েছে। তবে কিছু মানুষ যারা বাড়িঘরে থেকে গিয়েছিল তারা আমাদের খাবার দিয়েছেন। আশ্রয় দিয়েছেন। আমাদের গ্রামের একজন নারী এখনও বেঁচে আছেন, যিনি প্রায়ই আমাদের রান্না করে খাওয়াতেন।
দেশ স্বাধীনের পর প্রাপ্তি
তিনি বলেন, প্রথমে আমাদের ৩০০ টাকা ভাতা দেওয়া হতো। পরে এটাকে বাড়ানো হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ২০ হাজার টাকা হয়েছে। আমাদের যাদের ঘর নেই তাদের ঘর তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে।
আমরা যুদ্ধ শেষে যে বেঁচে ফিরব সে কথা ভাবিনি কখনও। এখনও অনেক মানুষের কবর পায় না স্বজনেরা। আমার সাথের একজন পায়ে গুলি খেয়েছেন। তিনি এখনও বেঁচে আছেন। লক্ষণশ্রীর একজন আছেন হাসিম। তিনিও বেঁচে আছেন। স্বাধীন দেশ আমাদের জন্য যা করছে, তাতে আমরা খুশি।
এমএসআর
টাইমলাইন
-
০১ জানুয়ারি ২০২২, ১৮:৩৬
বাবা তিন ভাইকে বললেন, তৈরি হও, তোমাদের যুদ্ধে যেতে হবে
-
৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:০৯
পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে যুদ্ধে অংশ নেন আজহার
-
২৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪:১৮
নববধূ রেখে রণাঙ্গনে যান মোশারেফ
-
২৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪:৩২
৭ দিন কলাগাছের পাতা খেয়ে ছিলাম
-
২৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪:৩৯
সেদিন সরে না আসলে ব্রাশফায়ারে আমার মৃত্যু হতো
-
২৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১৯:৩২
আমাকে লক্ষ্য করে ৩০ মিনিট গুলি ছোড়ে পাকিস্তানি বাহিনী
-
২৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪:৩৩
বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে ঘরে বসে থাকতে পারিনি
-
২৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫:০৮
রণাঙ্গনে ৪ সঙ্গী হারিয়ে আজও কাঁদেন সুভাষ চন্দ্র
-
২৩ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:৩৭
একাত্তরের স্মৃতিময় দিনগুলো আজও কাঁদায়
-
২২ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪:৫৬
আশপাশে সবাই শহীদ হলো, বেঁচে রইলাম আমি
-
২২ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩:৪৯
গলিত লাশের পোকায় ছেয়ে গিয়েছিল শরীর
-
২১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩:৪৭
অসুস্থ মাকে দেখতে গেলে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আটক হই
-
২১ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:৩৪
সেদিন আমরা বেঁচে গেলেও হত্যা করা হয় শ্রমিকদের
-
২০ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭:০০
আড়াই মাইল সাঁতরে জীবন বাঁচাই
-
২০ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬:০৫
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মানুষ রোজা পালন করতেন
-
১৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪:৫২
পাকিস্তানি সেনাদের দেখার সঙ্গে সঙ্গেই ফায়ারিং শুরু করি
-
১৮ ডিসেম্বর ২০২১, ২২:০৬
সেদিনের কথা মনে হলে আজও গা শিউরে ওঠে
-
১৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭:০১
তুই যুদ্ধে যা, আমিও আসছি
-
১৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:৪৪
ক্ষুধার জ্বালায় মানুষের বাড়ি থেকে ভাত খুঁজে এনে খেতাম
-
১৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:৪৫
টানা ১৯ দিন টর্চার সেলে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলাম
-
১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩:৪০
মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য অপেক্ষায় থাকতাম
-
১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:২৫
বরেন্দ্রের ত্রাস ছিল ‘রাজা বাহিনী’
-
১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ২০:১২
এক হাজার গুলি ছুড়ে সেদিন বিজয়োল্লাস করেছিলাম
-
১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬:৪২
গুলিবিদ্ধ হয়ে ধানখেতে অচেতন পড়ে ছিলাম তিন দিন
-
১৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭:১১
শতাধিক বিহারিকে খতম করি, কয়েক হাজার আত্মসমর্পণ করে
-
১৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩:৫৪
মা-বাবাকে না বলেই যুদ্ধে যান বোরহান উদ্দিন
-
১৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬:৪৮
পাকিস্তানি সেনাদের খুঁজে খুঁজে বল্লম দিয়ে খুঁচিয়ে মারি
-
১৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬:৪৩
মাকে মিথ্যা বলে চলে যাই যুদ্ধের প্রশিক্ষণে
-
১২ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬:২৫
গুলি ফুরিয়ে গেলে নারকেলগাছে উঠে বসি
-
১১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭:২০
শেখ মুজিব আমাদের জড়িয়ে ধরে বললেন ‘আপনাদের সঙ্গে আছি’
-
১১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬:১০
ক্ষুধার যন্ত্রণায় কেঁদেছি বারবার
-
১১ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:০০
একসঙ্গে ২৮০ পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করি
-
০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪:৩২
কাঁদছিলেন মা, বাবারও চোখ দিয়ে ঝরছিল পানি
-
০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩:০৯
পাকিস্তানি বাহিনী আমাদের ঘিরে ফেলে
-
০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫:৫৯
ঢাকা থেকে আট দিন ধরে হেঁটে এসে যুদ্ধে যোগ দিই
-
০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫:৪২
মা-বাবাকে না জানিয়েই রণাঙ্গনে যাত্রা করি
-
০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭:০৬
আমাকে মুক্তিযুদ্ধে যেতে উৎসাহিত করেন বাবা
-
০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:৫৯
বাড়ি থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি
-
০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫:৩৬
সহযোদ্ধা পাশে লুটিয়ে পড়েন, আমি গুলি চালিয়ে যাচ্ছি
-
০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:২৭
সামনে পাক বাহিনী, পেছনে রাজাকার, মাঝে আমি একা
-
০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:২২
মায়ের কাছ থেকে ৭০ টাকা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যান রশিদ
-
০৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:১৭
সেদিন ২৬ জন শত্রুকে খতম করেছিলাম
-
০২ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:৫৭
অস্ত্র জমা দিয়ে ১৩ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরি
-
০১ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:১৪
জানাজা শেষ করেই পাকিস্তানি বাহিনীকে ধাওয়া করি