এখনো স্বামীর মৃত্যুর খবর জানেন না দগ্ধ স্ত্রী-মেয়ে
বরগুনার পাথরঘাটা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক। উপজেলার কালমেঘা দাখিল মাদরাসার ইংরেজি শিক্ষক ছিলেন তিনি। এলাকায় তিনি রাজ্জাক মাস্টার নামেই পরিচিত।
দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন তার স্ত্রী হনুফা বেগম। তাই তার চিকিৎসার জন্য বরিশাল বিএম কলেজের শিক্ষার্থী মেয়ে রুবি আক্তাকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় গিয়েছিলেন রাজ্জাক। ১০ দিন ঢাকায় থেকে স্ত্রীর চিকিৎসা করিয়ে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান- ১০ লঞ্চে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তার আর বাড়ি ফেরা হয়নি।
গভীর রাতে সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর মা-মেয়েকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় বরিশালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। তবে স্বজনরা কোথাও রাজ্জাককে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। পরে বিকেলে উদ্ধার হওয়া মরদেহের মধ্যে থেকে রাজ্জাকের মরদেহ শনাক্ত করে স্বজনরা।
হনুফা বেগমের বোনের ছেলে শফিকুল বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে খালা অসুস্থ ছিল। তাই চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নিয়ে যান খালু ও খালাতো বোন। বৃহস্পতিবার তিনজনই বরগুনাগামী লঞ্চে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সব শেষ।
তিনি আরও বলেন, অগ্নিকাণ্ডে খালার দুই হাত ও পা আর বোনের শরীরের প্রায় অংশই পুড়ে গেছে। তারা এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছে। আর খালু চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তার লাশ শনাক্ত করে দাফন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত খালা ও বোনকে খালুর মৃত্যুর খবর বলিনি।
রাজ্জাকের স্ত্রী হনুফা বেগম স্বজনদের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, গভীর রাতে হঠাৎ লঞ্চে ধোঁয়া আর আগুন দেখে ছোটাছুটি শুরু করে যাত্রীরা। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো লঞ্চে। আমরাও ছুটছি। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের শরীরে আগুন লেগে যায়। নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার জন্য আমার স্বামী আমাকে ও মেয়েকে লঞ্চের সামনের দিকে ঠেলে দেয়। এরপর আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরে দেখি আমরা মা-মেয়ে হাসপাতালে। কিন্তু কোথাও আমার স্বামী নেই।
এসপি