খামখেয়ালি করে নগরভবন চালান মেয়র, ৭ কাউন্সিলরের নোটিশ

বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) দায়িত্বশীল পদে থেকে বেআইনি ও খামখেয়ালি করে সিটি করপোরেশন পরিচালনার অভিযোগ এনে মেয়রসহ ৩ জনকে আইনি নোটিশ করেছেন বর্তমান পরিষদের ৭ কাউন্সিলর।
রোববার (২ জানুয়ারি) সাত কাউন্সিলরের নিযুক্ত আইনজীবী আজাদ রহমান নোটিশ করেন। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব চাওয়া হয়েছে ওই নোটিশে।
ডাকযোগে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন নগরের ২৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিছুর রহমান। তিনি জানান, ডাকযোগে নোটিশ না পাঠালে তারা নোটিশ রাখতেন না। নোটিশটি ফেলে দিতেন। এ জন্য আইনী মাধ্যমে ডাকযোগে পাঠানো হয়েছে। এই কাউন্সিলর আরও বলেন, বর্তমান মেয়রের অত্যাচারে নগরবাসী অতিষ্ঠ। আমরা এর প্রতিকার চাই।
এদিকে কয়েকজন কাউন্সিলর নোটিশ প্রদানের বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছেন। তবে আনিছুর রহমান বলেন, অন্য কাউন্সিলর সবাই নোটিশে স্বাক্ষর করেছেন। এখন বলছেন না হয়তো ভয়ে।
নোটিশ দাতারা হলেন ২৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিল হুমায়ুন কবির, ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম, ২৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ আহমেদ, ২০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান, ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমির হোসেন বিশ্বাস, ২৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরীফ মো. আনিছুর রহমান (আনিছ শরীফ) ও ২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার।
বরিশাল সিটি মেয়র ছাড়াও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিবকে নোটিশ করা হয়।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক হোসেন বলেন, নোটিশের বিষয়টি আমি কিছুই জানি না। গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকে জানতে পারলাম। নোটিশ পেলে বলতে পারব কী বিষয়ে নোটিশ করা হয়েছে। এরপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়, সিটি করপোরেশনের প্রথম সভায় নির্বাচিত কাউন্সিলরদের নগর ভবনে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া সব কাউন্সিলরকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা হারে সম্মানী ও অন্যান্য ভাতা প্রদান করা হয়। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে সম্মানী ও অন্যান্য ভাতা ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়। অন্য কাউন্সিলরদের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে সম্মানী এবং অন্যান্য ভাতা ৫০ হাজার টাকা দেয় সিটি করপোরেশন। আর ডিসেম্বর মাসেও একই হারে ভাতা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে অব্যাহতভাবে প্রদান করা হয়। কিন্তু নোটিশদাতা ৭ কাউন্সিলরকে অক্টোবর, নভেম্বর মাসে ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। একই পরিষদে কাউন্সিলরদের সঙ্গে দ্বিমুখী আচরণ আইনত গ্রহণযোগ্য নয় বলে উল্লেখ করা হয়।
এ ছাড়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া এবং কাউন্সিলরদের স্বাক্ষর ছাড়া জনস্বার্থ উপেক্ষা করে হোল্ডিং ট্যাক্স এক হাজার শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। একই সাথে বরিশাল সিটি করপোরেশনের স্থায়ী বিভিন্ন কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের বেআইনিভাবে ওএসডি রেখে মাস্টার রোলে অদক্ষ কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ করে সিটি করপোরেশনের কাজ পরিচালনা করে আসছেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আইন, বিধি, সরকারি নিয়মকানুন, প্রজ্ঞাপন অনুসরণ না করে বর্তমান মেয়র, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সচিব খামখেয়ালিভাবে নগরভবনের কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। ফলে করপোরেশনের কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে এবং জন-অসন্তোষ দিন দিন বাড়ছে। এ ছাড়া করপোরেশনের আওতাধীন হাটবাজার বিধি অনুসারে টেন্ডারের মাধ্যমে পরিচালনা না করে একশ্রেণির ব্যক্তিদের স্বার্থ রক্ষা করে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের দিয়ে পরিচালনা করছে। বেআইনিভাবে নিযুক্ত করা ইজারাদারদের অত্যাচারে জনসাধারণ ক্ষুব্ধ।
নোটিশ দাতা আইনজীবী আজাদ রহমান বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মনঃপুত জবাব না পেলে নোটিশ দাতা কাউন্সিলররা আদালতের মাধ্যমে আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন।
তিনি আরও জানান, নোটিশের অনুলিপি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের পরিচালক, বরিশাল জেলা প্রশাসক, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উপপরিচালক, জনতা ব্যাংক লিমিটেড বরিশাল করপোরেট শাখার ব্যবস্থাপক ও জনতা ব্যাংক লিমিটেড বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপককে পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে মেয়র পদে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ৪০ জন কাউন্সিলর নিয়ে বর্তমান পরিষদ গঠন করেন।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এনএ