অনুসন্ধান ডেস্কের নেই সন্ধান

সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের অনুসন্ধান ডেস্কের সাইন বোর্ড সাঁটানো হয়েছে প্রায় ১ বছর হলো। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ভুল জায়গায় অনুসন্ধান ডেস্কের ব্যবস্থা করায় চালু করা যাচ্ছে না ডেস্কটি। এতে হাসপাতালে আসা সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

শান্তিগঞ্জ উপজেলার দরগাপাশা ইউনিয়নের সিচনি গ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমিন (৩৫)। কয়েকদিন ধরে পায়ের হাঁটুতে ব্যথা। এজন্য শনিবার (০৮ জানুয়ারি) ডাক্তার দেখাতে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে আসেন তিনি।

জরুরি বিভাগে দেখানোর পর এক্সরে করাতে ২০ নম্বর কক্ষে পাঠান কর্তব্যরত ডাক্তার। জরুরি বিভাগ থেকে বের হয়ে টোকেন হাতে নিয়ে খুঁজতে থাকেন ২০ নম্বর কক্ষ। কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করেও কাঙ্ক্ষিত কক্ষের সন্ধান পাচ্ছিলেন না তিনি। শেষে এ প্রতিবেদকের সাহায্য নিয়ে ২০ নম্বর কক্ষের এক্সরে রুমের সন্ধান পান তিনি।

রুহুল আমিন বলেন, আমার পায়ের ব্যথা। হাঁটতে পারি না। এজন্য ডাক্তার দেখাতে সুনামগঞ্জ এসেছি। জরুরি বিভাগের ডাক্তারকে দেখানোর পর ২০ নম্বর কক্ষ থেকে এক্সরে করানোর জন্য বলেন তিনি। ২০ নম্বর কক্ষ খুঁজে বের করতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে আমাকে।

শুধু রুহুল আমিন নয়, তার মতো অনেক সেবাগ্রহীতা হাসপাতালে সেবা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আটতলা ভবনের নিচতলায় অনুসন্ধান ডেস্ক থাকলেও এর কার্যকারিতা না থাকায় ক্ষোভ জানিয়েছেন তারা। তাই দ্রুত এই অনুসন্ধান ডেস্ক চালু করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

সেবাগ্রহীতা মো. ফয়েজ মিয়া বললেন, ১৫ দিন আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হই। এখন বুকে ব্যথা। কাউন্টার থেকে ৫ টাকা দিয়ে টিকিট নিয়েছি। এখন ডাক্তারের রুম খুঁজে পাচ্ছি না।

সুমন মিয়া বললেন, আমার ১৪ মাস বয়সী ছেলের ঠান্ডা লেগেছে। হাসপাতালে তাকে নিয়ে ভর্তি আছি কয়েকদিন হলো। এতো বড় হাসপাতালে এসে বোকা বনে যেতে হয়। এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষে যেতে ঘুরতে হয়। এতে অনেক সময় নষ্ট হয়। অনুসন্ধান ডেস্ক চালু থাকলে হাসপাতালের সেবা পাওয়া আরও সহজ হতো আমাদের জন্য।

সুনামগঞ্জ জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক সালেহীন চৌধুরী শুভ বলেন, হাসপাতালের দেয়ালে লেখা হয়েছে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ছবি, ভিডিও করা যাবে না। কেন এই নিয়ম করা হয়েছে সেটা আমরা বুঝি। এখানে অনুসন্ধান ডেস্ক রয়েছে, তবে এর কার্যকারিতা নেই। লিফট প্রায়ই অচল থাকে, মূল দরজায় প্রতিনিয়ত বিকট শব্দে বাঁশি বাজিয়ে রোগীদের স্নায়ুবিক সমস্যা তৈরি করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ সমস্যার সমাধানের দিকে নজর না দিয়ে ভোগান্তি আরও বাড়াচ্ছে।

এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ভুল জায়গায় অনুসন্ধান ডেস্ক বসানো ব্যবস্থা করেছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত বিভাগ। এখন সেখান থেকে সরিয়ে সিঁড়ির নিচে নেওয়া হবে ডেস্কটি। কারণ কলাপসিবল গেট হবে সামনে। আর এই গেটের পাশেই অনুসন্ধান ডেস্কটি স্থাপন করা হবে।

সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আনিছুর রহমান বলেন, ৭ ফুট লম্বার কলাপসিবল গেট লাগবে নিচতলার সিঁড়ির পাশে। গণপূর্ত অফিস তাদের মতো করে অনুসন্ধান ডেস্ক করেছে। আমি জানতাম না। পরে দেখার পর ডেস্কটি সামনে নিয়ে আসছি। এখন বলেছি কলাপসিবল গেট লাগিয়ে ঠিক করে দেওয়ার জন্য। তারা কাজ শেষ করে দিলে আমরা অনুসন্ধান ডেস্কের কাজ শুরু করতে পারব।

সুনামগঞ্জ গণপূর্ত অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মমিনুল হক বলেন, সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের ৮ তলাবিশিষ্ট নতুন ভবন করা হয়েছে। ভবনের ডিজাইনে যেখানে ছিলো সেখানে অনুসন্ধান ডেস্ক দেওয়া হয়েছে। এখন কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে অনুসন্ধান ডেস্ক সরানো দরকার তাহলে সরাব।

সাইদুর রহমান আসাদ/এমএসআর