‘গলায় গামছা পেঁচিয়ে নৌকার জন্য রাস্তায় নামবেন’

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর জন্য মাঠে নামতে ছাত্রলীগ নেতাদেরকে আল্টিমেটাম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। শনিবার (৮ জানুয়ারি) রাতভর পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দরে মহানগর ছাত্রলীগ নেতাদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালান স্থানীয় থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের সদস্যরা।
এ সময় ছাত্রলীগ নেতাদের স্বজনদের মারধর, অকথ্য ভাষায় গালাগালি, মোটরসাইকেল, সিসি টিভির যন্ত্রপাতি ও মোবাইল কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলছেন, নাসিক নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশেষ অভিযান চলছে। এটা তারই অংশ। সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের নেতাদের বাড়িতে কেন এমন অভিযান- এমন প্রশ্নের জবাবে কোনো মন্তব্য করেননি পুলিশ সুপার।
জানা গেছে, শনিবার বিকেলে বিলুপ্ত ঘোষণা করা নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সরকারি তোলারাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ভিপি হাবিবুর রহমান রিয়াদের বাড়িতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রথমে অভিযান চালান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে মাসদাইর বেকারির মোড় এলাকায় হঠাৎ করেই প্রায় ১১টি গাড়িতে করে অর্ধশত পুলিশ সদস্য ও ডিবি পুলিশের সদস্যরা রিয়াদের বাড়িতে প্রবেশ করেন। সেখানে তারা রিয়াদের বাড়িতে প্রবেশ করে প্রায় আধঘণ্টা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় তার মোবাইল ফোন ও মোটরসাইকেল নিয়ে যায় পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেন, রিয়াদের বাড়িতে প্রবেশের সময় তার ভাতিজা সিয়ামকে পেয়ে ৫/৬ জন পুলিশ সদস্য বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে।
হাবিবুর রহমান রিয়াদ বলেন, আমি গত এক মাস ধরে অসুস্থ, স্ক্রেচে ভর দিয়ে হাঁটতে হয়। এই অবস্থাতেই আমি নৌকার প্রার্থী আমাদের নেত্রী সেলিনা হায়াৎ আইভী আপার প্রচারণায় ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিচ্ছি। শনিবার কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে প্রচারণা সভার মধ্যেই আমাদের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। রাতে আমার বাসায় বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন প্রশাসনের লোকজন।
তিনি বলেন, তারা আমাকে আল্টিমেটাম দিয়ে বলে গেছেন, ‘গলায় গামছা পেঁচিয়ে নৌকার জন্য রাস্তায় নামবেন, না হলে ওপরের নির্দেশ কী হবে বুঝতেই পারছেন’। এ সময় তারা আমার মোটরসাইকেল, মোবাইল নিয়ে গেছে। আমার ভাতিজাকে বেদম পিটিয়েছে। আমি কি ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট না কি শিবিরের প্রেসিডেন্ট সেটা মনে হয় তারা ভুলে গেছে। যেখানে আমি আমার কর্মীদের নিয়ে নৌকার প্রচারণা করছি, সেখানে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডারদের রেখে আমার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে হাজার হাজার কর্মীর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটানো হলো।
এদিকে রাত ১২টার দিকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আহমেদ কাউসারের বাড়িতে হাজির হন পুলিশ সদস্যরা। সেখানে তাকে না পেয়ে বাড়ির লোকজনদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন আহমেদ কাউসার। ।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাসনাত রহমান বিন্দু বলেন, আমার বন্দরের বাড়িতে রাত ১টার দিকে প্রায় ৭ গাড়ি পুলিশ আসে। আমি বাড়িতে ছিলাম না। পুলিশ সদস্যরা আমার পরিবারের লোকজনদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছেন। আমার বাসার সিটি টিভির মেশিন নিয়ে গেছেন। মহানগর ছাত্রলীগের নেতা মিশুক, জিসানসহ আরও কয়েকজনের বাড়িতেও বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যরা গেছেন।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, ছাত্রলীগ নেতাদের বাড়িতে গিয়েছে কিনা আমি জানি না। তবে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে ডিবি পুলিশ, থানা পুলিশ ও বিশেষ অভিযানিক দল সর্বদা তৎপর রয়েছে। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিতভাবে সাইবার পেট্রোলিং চলছে। আমরা এখন পর্যন্ত ৫০টি মোটরসাইকেল জব্দ করেছি বিভিন্ন স্থান থেকে। মামলাও হয়েছে।
রাজু আহমেদ/আরএআর