মাঠে মাঠে বোরো আবাদের ধুম

কুষ্টিয়ায় মাঠজুড়ে ইরি (বোরো) ধান আবাদের ধুম পড়েছে। চলছে বীজতলা থেকে চারা তোলা, চারা লাগানো ও জমি প্রস্তুতের কাজ। কৃষকরা কাকডাকা ভোরে শীত উপেক্ষা করে ছুটছেন মাঠে।
উপজেলার কৃষকরা জানান, গত বছর জমির লিজ খরচ, সার, কীটনাশকের মূল্য বেশি এবং ধানের ফলন কম হওয়ায় হতাশ ছিলেন তারা। এবার সেই হতাশা কাটিয়ে মাঠে নামলেও ধানের ভালো দাম পাওয়ার ব্যাপারে শঙ্কা রয়েছে।
তাদের দাবি, ধানের ন্যায্যমূল্য যেন তারা পায়। এ বছর ন্যায্যমূল্য পেলে উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে ভালো ফলন ঘরে তুলবেন এবং লাভবান হবেন। সেই প্রত্যাশা নিয়ে বোরো নিয়ে এতো ব্যস্ততা কুষ্টিয়ার কৃষকদের মাঝে।
মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে মাঠে চলছে বোরো রোপণের ব্যস্ততা। কোথাও কোথাও বীজতলা থেকে চারা তুলে জমিতে রোপণ কাঁ হচ্ছে, কোথাও জমিতে পানি আটকানোর জন্য জমির আইল (সীমানা প্রাচীর) শক্ত করে বাঁধা হচ্ছে, কোথাও গভীর নলকূপ থেকে চলছে জলসেচ, ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার দিয়ে কোথাও চলছে জমি চাষের কাজ। ফলে তীব্র শীতেও ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কৃষকদের দম ফেলার সময় নেই।
কুষ্টিয়া কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া জেলার ছয় উপজেলায় ৩৩ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তার মধ্যে সদর উপজেলায় ১৩ হাজার ৭৫৬ হেক্টর, খোকসা উপজেলায় এক হাজার ২২৫ হেক্টর, কুমারখালী উপজেলায় ৪ হাজার ১৫৫ হেক্টর, মিরপুর উপজেলায় ৮ হাজার ৪৫৬ হেক্টর, ভেড়ামারা উপজেলায় এক হাজার ৫৫৫ হেক্টর এবং দৌলতপুর উপজেলায় ৪ হাজার ১৩৪ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া গ্রামের কৃষক খাদেমুল ইসলাম বলেন, আমি এ বছর ৬ বিঘা জমিতে ধান লাগাব। এ জন্য জমির প্রস্তুতের কাজ করছি। প্রায় ১০ কাঠা জমিতে বোরো ধানের চারা দিয়েছি। এই সপ্তাহের মধ্যেই চারা রোপণ করব।
একই এলাকার কৃষক মহিদুল ইসলাম বলেন, আজ ধানের চারা রোপণ করেছি। এই বছর ৩ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করব। এর আগে এই জমিতে সবজির (পালংশাক, লালশাক ও ফুলকপি) চাষ করেছিলাম।
সদর উপজেলার বাড়াদি এলাকার কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, আবাদ করতে গিয়ে খরচ বর্তমানে বেশি। সার কীটনাশকের দাম বেশি। আমি এ বছর ২ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছি। শুধু চারা রোপণ করতে তিন হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যা অন্যবারের চেয়ে প্রায় এক হাজার বেশি। তাছাড়া সার ও কীটনাশকের দামও বেশি।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার খলিশাকুন্ডি ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের কৃষক জাহিদ আলী বলেন, গত বছর ফলন ভালো হলেও ন্যায্য দাম না পাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছিলাম। তাই লোকসান কাটিয়ে ওঠার আশা নিয়ে এবারও বোরো ধানের আবাদ শুরু করেছি। গত দুইদিন আগে চারা রোপণ করা হয়েছে। সরকার যদি ভালো দামের ব্যবস্থা করে, তাহলে লাভবান হব ইনশাআল্লাহ।
কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শ্যামল কুমার বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, কৃষকরা এখন বোরো আবাদের জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ বছর বোরো চারার তেমন কোনো সংকট নেই। চলতি মৌসুমে সেচ সংকট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারলে বোরো ধানের বাম্পার ফলনসহ অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। গত মৌসুমে জেলায় ৩৩ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছিল। এবার ৩৩ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাজু আহমেদ/এসপি