শীতে কাবু হতদরিদ্ররা, এক মাসে অগ্নিদগ্ধ অর্ধশত

রংপুর অঞ্চলে মাঘের মাঝামাঝিতে জেঁকে বসেছে শীত। মৃদু ও মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত জনজীবন। কনকনে শীত আর হিমেল হাওয়ায় চরম বিপাকে শীতার্ত মানুষেরা। শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্দশাও বেড়েছে ছিন্নমূল মানুষদের। ভোর আর সন্ধ্যায় গ্রামে গ্রামে জটলা বেধে আগুন পোহানোর মাধ্যমে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে অনেকেই। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে আগুনের উষ্ণতা নিতে গিয়ে ঘটছে অগ্নিদগ্ধের ঘটনা।
গত এক মাসে শীত নিবারণে শুধু আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ জানুয়ারি শামছুন্নাহার, ১৩ জানুয়ারি আবেদা বেগমসহ আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে (রোববার) হাসপাতালে ১৮ জন দগ্ধ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক এম এ হামিদ পলাশ জানান, চিকিৎসাধীন বেশির ভাগ রোগীই শীতের তীব্রতা থেকে উষ্ণতা পেতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছেন। প্রতি শীত মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিদগ্ধের এমন ঘটনা ঘটে। বর্তমানে বার্ন ইউনিটসহ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গত বছর শীত মৌসুমে ২৫ জনের বেশি নারী ও শিশু দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
এ ছাড়া রমেক হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতের প্রকোপে বেড়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত নানা রোগীর চাপ। গত কয়েকদিনের তুলনায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
রমেক হাসপাতালের শিশু মেডিসিন বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. ফখরুল আলম বলেন, শীত বাড়ার সাথে সাথে শীতজনিত রোগীও বাড়তে শুরু করেছে। বেশির ভাগ শিশু ও বয়স্করা শীতে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। গত এক সপ্তাহে হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ৩৫০ শিশু ভর্তি হয়েছে।
এদিকে রংপুর আবহাওয়া অফিস বলছে, রোববার (৩০ জানুয়ারি) রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গতকালের চেয়ে ১ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। কুড়িগ্রামের রাজারহাট আর পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন শনিবার রংপুরে তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার ছিল ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এই জেলার ৮ থেকে ১১ ডিগ্রির মধ্যে তাপমাত্রা ওঠানামা করার সঙ্গে শীতের তীব্রতাও কম বেশি হচ্ছে।
অন্যান্য বছর ডিসেম্বরের শুরু থেকে এ অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বাড়লেও এ বছর শীত নেমেছে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে। নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহ থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়ে এখন তা অনেকটা মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে গত পাঁচ দিন ধরে হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশা এ অঞ্চলের মানুষকে কাহিল করে দিয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, রংপুরে তাপমাত্রা ৯ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। কুয়াশা বেশি থাকছে। শৈত্যপ্রবাহ আরও দুই-একদিন থাকতে পারে। এরপর আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হবে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই