কলিতেই শুকিয়ে যাচ্ছে ভালোবাসার গোলাপ
সাভারের বিরুলিয়ার গোলাপবাগানের চিত্র এবার ভিন্ন। অজানা এক রোগে কলিতেই বিনষ্ট হচ্ছে ভালোবাসার প্রতীক গোলাপ। ফলে ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারিতে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা তো দূরের কথা, খরচ তুলতে না পেরে দিশেহারা চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর, কাকাবো, বাগনীবাড়ী, সামাইর মইস্তাপাড়া, শ্যামপুর, বনগ্রাম, ভবানীপুর ও আক্রান এলাকাজুড়ে প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হয়। এর মধ্যে প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে শুধু গোলাপেরই চাষ হয়। বাকি ১০০ হেক্টরে চাষ হয় রজনীগন্ধা, জারবেরা, গ্লাডিওলাসসহ বিভিন্ন জাতের ফুল। আর এসব জমিতে প্রায় ৫ শতাধিক চাষি ও দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিরুলিয়ার গোলাপ গ্রামে গিয়ে চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনার কারণে দুই বছর অনুষ্ঠান ও গণজমায়েতে নিষেধাজ্ঞা ছিল। ফলে বাগানের যত্ন নেওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন গোলাপচাষিরা। এর ফলাফল ভোগ করতে হচ্ছে চাষিদের। এবার আবার ফুলের কড়ি বের হতেই শুকিয়ে যাচ্ছে ডালসহ ফুল-কড়ি। এ অবস্থায় কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে দাবি চাষিদের। প্রায় ৫ বছর আগেও এমন রোগে আক্রান্ত হয়েছিল অনেক বাগান। সেবারও ওষুধ ও কীটনাশক কোনো কাজে আসেনি।
সাদুল্লাপুর এলাকার ফুলচাষি মোহাম্মদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই রোগ ২০১৭ সালেও একবার এসেছিল। এবার ভরা মৌসুমে এসে আমাদের স্বপ্ন ভঙ্গ করল। আমি ২০ বিঘা জমিতে গোলাপের চাষ করেছি। এসব জমি থেকে ৭ লাখের বেশি গোলাপ উঠত। কিন্তু বর্তমানে ২০ বিঘায় আমার ফুল উঠেছে ১ হাজার। ফুলের চাহিদা বর্তমানে বেশি। কিন্তু আমরা সরবরাহ করতে পারছি না। বর্তমানে প্রতি পিস গোলাপ পাইকারী ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু আমাদের কপাল খারাপ। অজানা ছত্রাক আমাদের এবারও লোকসানের মুখে পড়তে বাধ্য করল।
গোলাপচাষি আব্দুর রশিদ বলেন, আমি ১২ বিঘা জমিতে গোলাপের চাষ করেছি। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পরে আবার ঋণ নিয়ে বাগান পরিচর্যা করেছি। এবার তো দেখছি ঋণ নিয়ে বিপদে পড়েছি। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে আবার হয়তো ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখা ছাড়া উপায় নেই। আজ বাগানে পাইকার এসে ভরে গেছে। কিন্তু ফুল দিতে পারছি না। দাম থাকলেও বাগানে ফুল নেই।
ফুলচাষি আলম বলেন, দুশ্চিন্তা যেন পিছু ছাড়ছে না। একের পর এক মহামারিতে পিষ্ট হয়ে দুচোখে অন্ধকার দেখছি। এখন বিনা সুদে ঋণ ছাড়া আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। আমরা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করেও রোগের প্রতিকার পাচ্ছি না। ২০১৭ সালের মতো এবারও নিশ্চিত ক্ষতিতে পড়ে গেছি।
বিরুলিয়ার ফুলচাষি বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমদাজ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের বিরুলিয়ার প্রায় তিন হাজার পরিবার গোলাপবাগানের ওপর জীবিকা নির্বাহ করে। করোনার কারণে গত দুই বছর ফুলের চাহিদা ছিল না। এই দুই বছরে চাষিদের ২৫ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। এই লোকসান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে ৯০ শতাংশ চাষি ঋণ নিয়ে আবার পরিচর্যা শুরু করেছিল বাগানের। কিন্তু আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব ও অজানা রোগে আবারও স্বপ্নভঙ্গ হলো চাষিদের। এবার সরকারি সহযোগিতা ছাড়া আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। তাই বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে চাষিদের সংকট থেকে উত্তোরণের দাবি জানাই।
সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, শীতের পাশাপাশি বৃষ্টি ও ছত্রাকের কারণে গোলাপের গাছ খাবার শোষণ করতে পারছে না। এ কারণে বাগানের ফুল, কলি ও ডাল শুকিয়ে যাচ্ছে। যথাযথ ওষুধ দিলেও কাজ হচ্ছে না। তবে আমরা পর্যাপ্ত চেষ্টা করছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে সহযোগিতা করার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইতোমধ্যে কথা বলেছি।
এসপি