উপহারের ঘরে ফাটল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উপহার হিসেবে দেশের ভূমি ও গৃহহীনদের ঘরসহ জমি প্রদান করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় ভূমিসহ ঘর পেয়েছেন ৫৩টি পরিবার। তবে এরইমধ্যে নবনির্মিত এসব ঘরে দেখা দিয়েছে ফাটল। আর বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয় প্রশাসন তাড়াহুড়ো করে ওইসব ফাটল বন্ধের চেষ্টা করছেন।
এদিকে ফাটল ধরা ঘর নিয়ে উপকারভোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তারা ভয়ে এসব ঘরে উঠতে অপারগতা প্রকাশ করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় পূর্বধলা উপজেলায় প্রথম ধাপে ৫৩টি ঘর নির্মাণ করা হয়। উপজেলার ৫৩টি পরিবারের প্রত্যেকের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ শতাংশ করে খাসজমি ও একটি ঘর। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা করে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যার পুরোটাই বহন করা হচ্ছে।
কিন্তু এই ৫৩টি ঘরের মধ্যে পূর্বধলা উপজেলার বিশকাকুনি ইউনিয়নের ধলা গ্রামে নির্মিত ১২ ঘর উপকারভোগীদের মধ্যে হস্তান্তর করার পূর্বেই ফাটল দেখা দিয়েছে। খসে পড়ছে পলেস্তারা।
উপকারভোগী দুদু মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘স্যারেরা আগে তাগদা দিছে ঘরো উডনের লাইগে, আর অহন কয়, উডন লাগত না। আরও কিছুদিন পরে ঘরো উডনের কথা কয়। কারণ বানানির লগে লগেই ঘর ফাইট্টা গেছেগা। হায় আল্লাহ, এইতা কিতা কয়। বানানির আগেই ফাইট্টা যায় কেমনে। আমার অহন ভয় লাগতাছে। পোলাপান লইয়া ভাঙা ঘরো যাইতাম না।’
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য খলিলুর রহমান বলেন, ‘নতুন মাটি কাটার পরপরই ঘরগুলো নির্মাণ করায় মাটি দেবে ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। ঘরগুলো খুব বিপদজনক হয়ে গেছে। বৃষ্টি শুরু হলে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।’
নতুন মাটি দেবে ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে জানান এসব ঘর নির্মাণ প্রকল্পের কাজে জড়িত কর্মকর্তারাও।
আগামী বর্ষায় পরিস্থিতি দেখে উপকারভোগীদের ঘর ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে জানিয়ে পূর্বধলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘর নির্মাণে কোনো রকম অনিয়ম হয়নি। মাটি কাটার পর তাড়াতাড়ি ঘরগুলো নির্মাণ করার কারণে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে।
পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে কুলসুমের সঙ্গে কথা হলে তিনিও মাটি দেবে ঘরে ফাটল দেখা দেওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, ঘর সঠিক নিয়মে করা হয়েছে। তবে ঘরের কাজ এখনও চলমান রয়েছে। ঘরগুলোর ফাটল বন্ধে কাজ করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রথম ধাপে নেত্রকোনার ১০ উপজেলায় মোট ৯৬০ ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে জেলার সদর উপজেলায় ৪৩টি, বারহাট্টায় ৪৫, আটপাড়ায় ৯৮, পূর্বধলায় ৫৩, দুর্গাপুরে ৩৫, কেন্দুয়ায় ৫০, কলমাকান্দায় ১০১, মদনে ৫৬, মোহনগঞ্জে ৩৬ ও খালিয়াজুরী উপজেলায় ৪৪৩টি ঘর নির্মাণ করা হয়।
জিয়াউর রহমান/এমএসআর