শেরপুরে সরকারি জমিতে দোকান নির্মাণের অভিযোগ

শেরপুরে সরকারি রাস্তা দখল ও খাস জমিতে দোকান নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের কুসুমহাটি বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সরকারি খাস জায়গা লিজ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে আগুনে ২০টি দোকানের মালামাল পুড়ে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যবসায়ীরা। এরপর জেলা প্রশাসন ও হুইপ আতিক অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে নগদ টাকাসহ টিন তুলে দেন। পরবর্তীতে দোকান পুনর্নির্মাণের সময় কয়েকজন ব্যবসায়ী কৌশলে তাদের দোকানপাট পাকা করে নেয়।
ঝরনা চাল আড়তের স্বত্বাধিকারী হযরত আলী বলেন, আমি একজন সাধারণ চাল ব্যবসায়ী। কুসুমহাটি বাজারে সরকারি খাস জমিতে কে ভবন তুলবে? কে আরসিসি ঢালাই করবে? কে সরকারি রাস্তায় দোকান বসাবে? সেটি দেখার বিষয় আমাদের না। এটি নজরদারিতে রাখবে যথাযাথ কর্তৃপক্ষ।
তবে একটা কথা বলতে চাই, কুসুমহাটি মহাসড়ক থেকে বাজারের মধ্য দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত একটি প্রশস্ত রাস্তা ছিল। অতীতে আমরা সহজেই প্রয়োজনীয় পণ্য গাড়িতে করে দোকানে আনতে পারতাম। ক্রেতা সাধারণও এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে পারত। কিন্তু অনেক ব্যবসায়ী সরকারি নিয়ম না মেনে এই রাস্তা দখল করে খাস জমিতে উঁচু ভবন নির্মাণ করছে। তাই এখন বাড়তি টাকা খরচ করে শ্রমিক দিয়ে মহাসড়ক থেকে পণ্য দোকানে আনতে হয়। এদিকে রাস্তা দখলের ফলে অতীতের প্রশস্ত রাস্তাও এখন গলিতে পরিণত হয়েছে।
নাজিম চাল আড়তের স্বত্বাধিকারী নাজিম মিয়া বলেন, আমরা অনেক বছর ধরে কুসুমহাটি বাজারে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। অতীতের সুপ্রশস্ত ১২ ফুট রাস্তা এখন অবৈধ দোকানদারদের দখলে। দিনে দিনে তারা তাদের দোকানপাট সামনের দিকে এনে পাকা করছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশ ও অনুরোধ তারা মানেননি।
স্থানীয় জিয়াউল হক জানান, সরকারি খাস জমি ভাড়া নিয়ে যে কেউ ইচ্ছেমতো কিছু করতে পারবে না। মন চাইলেই কেউ রাস্তা দখল করবেন, কেউ ৫ তলা বানাবেন- এটা আমরা হতে দেবো না। আমরা সাধারণ এলাকাবাসী চাই, সব ব্যবসায়ী যেন সমান সু্বিধা ভোগ করেন।
কুসুমহাটি বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি করোনায় আক্রান্ত। গত ১২ দিন ধরে আমি বাড়িতেই অবস্থান করছি। তবে কুসুমহাটি বাজারে ব্যবসায়ীদের পাকা দোকান নির্মাণের বিষয়টি মোবাইলে জেনেছি। সেখানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং ভূমি অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত নায়েব ব্যবসায়ীদের দোকান পাকা না করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তবে তারা সেটা মানেননি। যদি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পাকা করার শুরুতে তাদের বাধা দেওয়া যেত তাহলে ঘটনাটি ঘটতো না।
লছমনপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাই ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর আমরা ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করেছি। সেসময় জেলা প্রশাসন ও হুইপ আতিক আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে নগদ টাকাসহ টিন তুলে দেন। পরবর্তীতে পুড়ে যাওয়া দোকান পুনর্নির্মাণের সময় কয়েকজন ব্যবসায়ী কৌশলে তাদের দোকান পাকা করেছে। ওই সময় আমি তাদের দোকান পাকা না করার অনুরোধ করি। তবে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান তাদের কাছ থেকে ভূমি অফিস ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছে। পাশাপাশি তারা ভবন নির্মাণের অনুমতিও পেয়েছেন।
এ বিষয়ে শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহনাজ ফেরদৌস ঢাকা পোস্টকে জানান, সরকারি বিধিমালায় খাস জমির হাটবাজারে কোনো ঘর পাকাকরণের নিয়ম নেই। কারণ তারা অস্থায়ী ভিত্তিতে সরকারের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। কুসুমহাটি বাজারে রাস্তা দখলেরও অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা প্রসাসক মো. মোমিনুর রশীদ ঢাকা পোস্টকে জানান, সরকারি জমিতে পাকা ঘর নির্মাণ ও রাস্তা দখলের বিষয়টি জেনেছি। শিগগির এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জাহিদুল খান সৌরভ/এসপি