বাংলাদেশ-নেপাল বাণিজ্য চুক্তি এ বছর না হওয়ার শঙ্কা

এ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ-নেপাল প্রথম অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল। তবে শেষ সময়ে এসে নেপালি কর্মকর্তারা যা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় অমীমাংসিত থাকায় এ চুক্তি পূর্বনির্ধারিত সময়ে স্বাক্ষরিত নাও হতে পারে।
এ বছরের অক্টোবরের ৮ তারিখে বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়টিকে সামনে রেখে দুই দেশের বাণিজ্য সচিব পর্যায়ে ভিডিও কনফারেন্সে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই এ বছরের শেষ নাগাদ চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে একমত হয়েছিল দুই দেশ।
ওই কনফারেন্সের সিদ্ধান্ত মোতাবেক নির্দিষ্ট কিছু পণ্যে নেপালের শুল্ক সুবিধা পাওয়ার কথা। এখানে শুল্ক সুবিধা বলতে শুল্ক কমানোর কথা বলা হয়েছিল, শুল্কমুক্ত সুবিধা নয়।
নেপালের শিল্প, বাণিজ্য ও সরবরাহ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসছে।
ওই কর্মকর্তার মতে, অগ্রাধিকারমূলক ওই বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের শর্ত হিসেবে অক্টোবরে ভিডিও কনফারেন্সে অন্য সব শুল্ক বাতিলের দাবি জানিয়েছিল নেপাল এবং সেটিকেই বৈঠকের প্রধান এজেন্ডা হিসেবে রাখা হয়েছিল। সম্পূরক শুল্কগুলো সাধারণত পরোক্ষভাবে যুক্ত হয়।
নেপালের তরফ থেকে এজেন্ডা তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত ওই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ সম্পূরক শুল্ক বাতিলের এই প্রস্তাবে রাজি নয়। এ বছর শেষ হতে আর মাত্র দু'সপ্তাহ রয়েছে আমরা এখনও বাংলাদেশের তরফ থেকে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাইনি।
ঝাড়ু তৈরিতে ব্যবহৃত ঘাস, মসলা, বাঁধাকপি, টমেটো, কিউয়ি, অ্যাভোক্যাডো, কমলা, মসুর ডাল, আচার, স্নাকস, কার্পেট, ডেইরি পণ্য বাংলাদেশ থেকে নেপাল থেকে আমদানি করে।
ওই কর্মকর্তা বলছেন, বাংলাদেশ যেহেতু বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য তাই বাংলাদেশ চাইলে সম্পূরক শুল্কে ছাড় দিতে পারে। নেপাল থেকে রফতানি করা পণ্যে শুল্কের ওপর সম্পূরক শুল্ক যুক্ত হওয়ার পর মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৩০ থেকে ১৩২ শতাংশ। কিন্তু তারা এটা প্রত্যাহারে রাজি নয়, যেহেতু এতে তাদের রাজস্ব কমবে।
বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত সুবিধা দিয়ে নেপালি পণ্যে একই সুবিধা না পাওয়া গেলে তা নেপালের জন্য লাভজনক হবে না।
তিনিও আরও বলেন, নেপাল যেসব বিষয় তুলেছে এসব বিষয়ে সমাধানে খুব একটা অগ্রগতি হয়নি। ডিসেম্বরের মধ্যে আমাদের এ চুক্তিটি করে ফেলার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু বাংলাদেশের তরফ থেকে কোনো অগ্রগতি এখনও দেখা যাচ্ছে না।
মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলছেন, ওডিসি প্রত্যাহার না করে অগ্রাধিকামূলক এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে তা নেপালের জন্য লাভজনক হবে না। নেপালের তরফ থেকে পরিস্থিতির বিষয়ে একটা খসড়া প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, তবে বাংলাদেশ এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
অক্টোবরের বেঠকে নেপালের দিক থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দেশটির শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব বৈকুণ্ঠ আড়িয়াল। ওই বৈঠকে তালিকাভুক্ত পণ্যগুলোতে ট্যারিফ, প্যারা-ট্যারিফ এবং নন-ট্যারিফ বাধাগুলোর বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছিল কিন্তু অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যচুক্তির আওতায় কোন পণ্যগুলো আসবে তার তালিকা চূড়ান্ত হয়নি।
বাংলাদেশ এখনও মিটিং মিনিটসে স্বাক্ষর করেনি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, নেপাল চূড়ান্তটি সম্প্রতি পাঠিয়েছে।
পণ্যের তালিকা, অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যচুক্তির বিষয়বস্তু ও রুলস অব অরিজিন চূড়ান্ত করতে নভেম্বরের ৬-৭ তারিখে বৈঠকে বসেছিল টেকনিক্যাল কমিটি। দু'পক্ষ পণ্য তালিকা আদান-প্রদান করেছে এবং তা পর্যালোচনা করছে।
১০৮টি নেপালি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ। মসুর ডাল, চা, কফি, বড় এলাচ, ঝাড়ু, ফলের মতো কিছু পণ্য এ তালিকায় যুত্ত করতে চায় নেপাল। তাদের ভাষ্য, যেসব পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় না, বাংলাদেশে সেগুলো ঢুকতে সমস্যার মুখে পড়তে হয়।
এরআগে মার্চে অনুষ্ঠিত সচিব পর্যায়ের বৈঠক থেকে জুুনের মধ্যে এই অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে একমত হয়েছিল দুই দেশ। তবে করোনা ভাইরাসের জন্য ওই তারিখ পিছিয়ে যায়।
এই চুক্তির আওতায় যেসব পণ্য থাকবে নেপাল সেগুলোতে জিরোট্যারিফ সুবিধার সঙ্গে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিও করছে।
নেপালের সরকারি কর্মকর্তাদের মতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীও অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যচুক্তির বিষয়টি যত দ্রুত সম্ভব চূড়ান্ত করে ফেলতে চান।
দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট।
এনএফ