দুর্বল প্রতিষ্ঠান সংস্কারে করণীয় কী, জানতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক

Dhaka Post Desk

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১০:০৬ পিএম


দুর্বল প্রতিষ্ঠান সংস্কারে করণীয় কী, জানতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন | ছবি- ঢাকা পোস্ট

অনিয়ম, দুর্নীতি আর লুটপাটের কারণে দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিকপ্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারে কী পদক্ষেপ নেওয়া যার তা জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে লিখিত কর্মপরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে।

বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আর্থিকপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসি) বৈঠকে এ তথ্য চাওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, নানা কারণে সমস্যায় থাকা আর্থিক খাতের সংকট করোনার প্রভাবে আরও বেড়েছে। পিকে হালদার ও উত্তরা ফাইন্যান্স কেলেঙ্কারিতে আমানত ফিরে না পাওয়ার শঙ্কায় গ্রাহক। এখন আমানত উঠিয়ে নিতে চাপ দিচ্ছেন তারা। সংকট মোকাবিলায় ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ একটি তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছেন এমডিরা।

এছাড়া সব ধরনের ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার নির্দেশনা বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়েছে খাতটির জন্য। এসব সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেন আর্থিকপ্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীরা।

এ বিষয়ে বিএলএফসি চেয়ারম্যান ও আইপিডিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিনুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছি। আর্থিক খাতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন কারণে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সমস্যায় পড়েছে। দুর্বল হওয়া আর্থিকপ্রতিষ্ঠান সংস্কারে করণীয় কী, কোন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায়— কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ বিষয়ে লিখিত কর্মপরিকল্পনা জমা দিতেও বলা হয়েছে।

জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ৩৬টি আর্থিকপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ১১টির অবস্থা খুবই দুর্বল। এর একটি হলো পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেস। বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের কারণে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এরই মধ্যে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেসকে অবসায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেস ও এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টসহ আরও কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানও আমানতকারীদের অর্থ যথাসময়ে ফেরত দিতে পারছে না। এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে কী করা যায় তা জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ বিষয়ে বিএলএফসিএ’র ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার ভূঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আর্থিক খাতের বর্তমান সংকটাপন্ন অবস্থা থেকে কীভাবে উত্তরণ করা যায়, কীভাবে আর্থিকপ্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং গুড গভর্নেন্স প্রতিষ্ঠা করা যায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ঋণ প্রদান ও ঋণ আদায়ের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এছাড়া প্রস্তাবিত ফাইন্যান্স কোম্পানি অ্যাক্ট দ্রুত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সুপারিশ করেছে বিএলএফসিএ।

ক‌রোনার ক্ষ‌তি পু‌ষি‌য়ে নি‌তে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার পরও আর্থিকপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বেড়েছে খেলাপি ঋণের প‌রিমাণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর (২০২০) শে‌ষে এনবিএফআইয়ের খেলাপি ঋণ দাঁড়ি‌য়ে‌ছে ১০ হাজার ২৪৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। যা বিতরণ হওয়া মোট ঋণের ১৫ শতাংশ। আগে জুন প্রান্তিকে মোট খেলাপি ছিল মোট ঋণের ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের প্রথম নয় মাসে এ খাতে তিন হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এর মধ্যে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর— এই তিন মাসে বেড়েছে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

এসআই/এমএআর/

Link copied