ব্যাংক ঋণের সুবিধাবঞ্চিত ৯১ শতাংশ এসএমই উদ্যোক্তা

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের মোট বিতরণ করা ঋণের মাত্র ১৮ শতাংশ দেয় দেশের এসএমই খাতে। যা পায় মাত্র ৯ শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান। বাকি ৯১ শতাংশ এসএমই ব্যাংক ঋণের সহায়তাবঞ্চিত।
এছাড়াও গত কয়েক বছরে ব্যাংকের মোট ঋণের অনুপাতে এসএমই ঋণের হার কমেছে। যা দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
রোববার (১৪ আগস্ট) এফবিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর এসএমই উন্নয়ন ভাবনা ও বর্তমান প্রেক্ষাপট শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে এসব কথা বলেন এফবিসিসিআইয়ের প্যানেল উপদেষ্টা ও সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
তিনি জানান, স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে এসএমই খাতের উন্নয়ন করে বৈষম্য কমিয়ে আনতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। দেশের বর্তমান ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের পেছনে এসএমই খাতের বিকাশ না হওয়াকে দায়ী করেন এই অর্থনীতিবিদ। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে দেশের এসএমই ঋণের সম্ভাব্য বাজার ২৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যাংকের ঋণ কাঠামোতে এসএমই খাত অবহেলিত।
সেমিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, শুধু মুনাফা করাই ব্যাংকের কাজ নয়। তাদের অবশ্যই জাতীয় দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেজন্যই তাদের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। নগরাঞ্চলে বড় গ্রাহকদের ঋণ দিয়ে শহর-গ্রামের মধ্যে বৈষম্য বাড়ানো ব্যাংকের কাজ নয়। বরং উন্নয়ন সুষম করার দায়িত্ব।
মন্ত্রী বলেন, এসএমই নিয়ে সবাই কথা বলে, কিন্তু কোন কাজ করে না।
সরকারি পর্যায়ের সীমাবদ্ধতাগুলো দ্রুত কাটিয়ে ওঠার আশ্বাস দিয়ে মন্ত্রী বলেন, এসএমই ফাউন্ডেশনকে আর্থিকভাবে সক্ষম করতে হবে।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, এসএমই অর্থনীতির মেরুদণ্ড। কিন্তু এই খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ দিতে অনীহা রয়েছে। তারা সহজে বড় গ্রাহকদের ঋণ দিতে পছন্দ করে। কেননা এতে ব্যাংকারদের কষ্ট কম হয়।
এসএমই খাতের মূল সমস্যা অর্থায়ন উল্লেখ করে সভাপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এসএমই খাতে ২২ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন। বৃহৎ খাতের ঋণ তিন মাসের মধ্যে বিতরণ হলেও, এসএমই খাতের ঋণ ২ বছরেও বিতরণ হয়নি। কেননা ব্যাংকগুলো এসএমই উদ্যোক্তাদের টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না ।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. মো. মাসুদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, বড় শিল্প যেভাবে সরকারি নীতি সহায়তা পায়, ছোট উদ্যোক্তারা সেভাবে পান না। কর ও শুল্ক কাঠামোর কারণে স্থানীয় বাজার থেকে কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য না কিনে বিদেশ থেকে আমদানি উৎসাহিত হচ্ছে।
একই অভিযোগ করে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান জানান, এসএমই বিকাশে সরকারের আর্থিক আনুকূল্য ও প্রকল্প আনুকূল্য পাওয়া যায় না। ২০১৯ সালের এসএমই নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য ২১৪১ কোটি টাকার বাজেট হলেও তার বিপরীতে কোন অর্থ পাওয়া যায়নি।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী, মো. হাবীব উল্ল্যাহ ডনসহ পরিচালকরা। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন এফবিসিসিআইয়ের মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।
এসআই/এসকেডি