মরদেহের গোসলখানা তৈরি করতে চায় মাস্তুল ফাউন্ডেশন

মরদেহের গোসলখানা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লাশ রাখার স্থান এবং দ্বিতীয় তলায় মসজিদ ও তৃথীয় তলায় এতিম শিশুদের থাকার জায়গা নিয়ে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে যাকাত ফেয়ারে এসেছে মাস্তুল ফাউন্ডেশন নামক একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।
শনিবার (১১ মার্চ) রাজধানীর গুলশান তেজগাঁও লিংক রোডের আলোকি কমিউনিটি সেন্টারে ১১তম যাকাত ফেয়ারের উদ্বোধন করা হয়েছে। সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্টের (সিজেডএম) উদ্যোগে ‘মেকিং অ্যা ডিফারেন্স উইথ যাকাত’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ ও আগামীকাল (রোববার) দুই দিনব্যাপী এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই মেলাতেই স্টল নিয়ে নিজেদের এমন সেবামূলক কার্যক্রমে সহযোগিতা চাইছে মাস্তুল ফাউন্ডেশন।
মেলায় কথা হয় মাস্তুল ফাউন্ডেশনের হেড অফ কমিউনিকেশন কাজী রায়হান রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এটি অলাভজনক সেবামূলক একটি প্রতিষ্ঠান। করোনায় আমরা ১৮শ মরদেহ গোসল ও দাফনের কাজ করেছি। অসহায় দুস্থ মানুষের জন্য আমাদের রয়েছে অ্যাম্বুলেন্স সেবা। বর্তমানে ৬৫ এতিম শিশুর দেখভাল করছি। গত রমজানে প্রায় ২৫ হাজার গরীব-অসহায় মানুষকে ইফতার করিয়েছি, খাদ্য পৌঁছে দিয়েছি। আসন্ন রমজানে এবার আমাদের টার্গেট ৫০ হাজার মানুষকে সেবা দেওয়া। আমাদের একটি মেহমানখানা আছে, যেখানে গরীব-অসহায় মানুষসহ হাফেজ ও এতিমরা খেতে পারেন নামমাত্র মূল্যে।

তিনি আরও বলেন, আমরা এখন মরদেহের গোসলখানা নির্মাণ করতে চাই। যার নিচ তলায় থাকবে এই গোসলখানা, পাশে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মরদেহ রাখার স্থান, দ্বিতীয় তলায় থাকবে নামাজের জায়গা ও তৃতীয় তলায় থাকবে এতিমদের থাকার স্থান। এই সেবামূলক নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছি। সার্বিক বিষয় নিয়ে যে কেউ আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারবেন। এজন্য আমারা যাকাত ফেয়ারে আমাদের স্টল নিয়েছি। যাকাতের টাকাসহ যেন দানকারীরা তাদের সহযোগিতা করতে পারে। আমাদের অফিস বা ওয়েবসাইটে যোগাযোগ করে যেকেউ এগিয়ে আসতে পারবেন। এছাড়া আমাদের মাস্তুল ফাউন্ডেশন নামে একটি স্কুলও আছে যেখানে প্রায় ২৫০ জন অসহায় শিক্ষার্থীর বিনামূল্যে পড়তে পারছে।
এদিকে যাকাতের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ধারণাকে জনপ্রিয় করতে ঢাকায় শুরু হয়েছে যাকাত ফেয়ার।
যাকাত ফেয়ারে বিভিন্ন যাকাত প্রতিষ্ঠানের স্টলসহ ফেয়ারে যাকাত কনসালটেশন ডেস্ক ও বিভিন্ন ধরনের ইসলামিক বইয়ের স্টল রয়েছে। যাকাত ফেয়ার সবার জন্য উন্মুক্ত থাকছে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। সবাইকে ব্যক্তিগত যাকাতের সঠিক হিসাব নিরূপণসহ ব্যবসায় যাকাত নির্ণয় (ক্যালকুলেশন) পদ্ধতিসহ বিস্তারিত জানতে ফেয়ার পরিদর্শন করার আহ্বান জানিয়েছেন আয়োজকরা।
যাকাত ফেয়ার অর্গানাইজিং কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবারের যাকাত ফেয়ার চলাকালীন মোট ছয়টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে ‘সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি ও যাকাতের ভূমিকা’ শীর্ষক উদ্বোধনী সেমিনার। বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে নারীদের জন্য ‘সমাজে সালাত ও যাকাত প্রতিষ্ঠায় নারীর ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনার ও প্রশ্নোত্তর বিষয়ক অনুষ্ঠান। একই সময় আলাদা হলে অনুষ্ঠিত হবে ‘ভবিষ্যতের যাকাত শুভেচ্ছাদূত’ শীর্ষক সাবেক জিনিয়াস স্কলারদের মিলনমেলা। এছাড়া স্কুল, মাদ্রাসা ও জিনিয়াস বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণের আয়োজন করা হয়েছে।
ফেয়ারের দ্বিতীয় দিন সকালে খতিব ও ইমামদের জন্য ‘যাকাতের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনায় ইমাম ও খতিবদের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে এবং বিকেলে ‘কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা, যাকাত ও সিএসআর তহবিলের সমন্বয়সাধন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সাবেক সচিব আরাস্তু খানের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। এছাড়াও এতে দেশের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ অংশ নেবেন।
এএসএস/ওএফ