সাড়ে ৭ বছর পর বাংলাদেশ ব্যাংকে আতিউর, বললেন ‘অন্যরকম অনুভূতি’

বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটে ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে। ওই রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। শেষ পর্যন্ত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের সহযোগিতায় মাত্র দেড় কোটি ডলার উদ্ধারে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।
রিজার্ভ চুরির ওই ঘটনায় তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ পদত্যাগের পর আর বাংলাদেশ ব্যাংকে যাননি তিনি। প্রায় সাড়ে ৭ বছর বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে ‘অন্যরকম অনুভূতি’র কথা ব্যক্ত করেছেন দেশের একমাত্র পদত্যাগ করা সাবেক এ গভর্নর।

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আতিউর রহমান লিখেছেন, ‘এক অন্যরকম অনুভূতি। প্রায় সাড়ে সাত বছর পরে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়েছিলাম। এই প্রতিষ্ঠানটি আমার সন্তানের মতো। তাই এতদিন পরে এখানে পা রাখতেই আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম। কতো কথা। কতো স্মৃতি!’
‘প্রথমেই চলে যাই গ্রন্থাগারে। নিঃসন্দেহে এটি বাংলাদেশে সবচেয়ে আধুনিক ও প্রযুক্তি-নির্ভর গ্রন্থাগার। বইয়ের সমাবেশের পাশাপাশি রয়েছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গ্রন্থাগারের সঙ্গে ডিজিটাল সংযোগ। আছে চমৎকার পড়ার ব্যবস্থা। আছে ছোটো বড়ো আলাপ ও জ্ঞান বিনিময়ের সুযোগ। মন ভরে গেল গ্রন্থাগারটির নান্দনিক ও জ্ঞানভিত্তিক আয়োজন দেখে। এর পরিচালনার সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের দক্ষতা, নিষ্ঠা এবং আবেগের মাত্রা দেখে আমি সত্যি অভিভূত হয়ে যাই। এমন একটি আধুনিক জ্ঞানকেন্দ্র তৈরি স্বপ্ন আমি অনেক দিন ধরেই দেখে আসছিলাম। আমি গভর্নর থাকতে থাকতেই আমার প্রিয় সহকর্মীরা এমন একটি মনকাড়া জগৎজোড়া গ্রন্থাগার গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন বলে আমি সত্যি গর্বিত। গ্রন্থাগারের মুজিব কর্নারটিও চমৎকার। ভালো লাগলো আমার লেখা বইগুলো দিয়ে তারা একটি আলাদা কর্নারও গড়ে তুলেছেন। তাদের এই ভালোবাসার কথা কোনোদিন ভুলব না। কাল আরও ছটি বই দিয়ে এসেছি এই গ্রন্থাগারে।’

‘এরপর আমার চিরচেনা গভর্নরের দপ্তরে গেলাম। সেখান থেকে বোর্ড রুম। হলো নীতি আলাপ ঘণ্টা দুই ধরে। সহকর্মীদের প্রিয় মুখগুলো মনের মধ্যে গেঁথে আছে। সবার মঙ্গল কামনা করছি। চিরদিন বাংলাদেশ ব্যাংক পরিবারের একজন হিসেবেই থাকতে চাই।’
আরও পড়ুন
উচ্চ মূল্যস্ফীতি চাপে দেশ। সঙ্গে চলছে তীব্র ডলার সংকট। বাজেট ঘাটতি অর্থনৈতিক সংকট নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাই সমাধান খুঁজতে অর্থনীতিবিদ ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞসহ খাত সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ নিচ্ছে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাটি। তারই অংশ হিসেবে বুধবার বিকেলে আলোচনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়েছিলেন সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান।

বৈঠকে সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান চলমান অর্থনীতির সংকট সমাধানে বিভিন্ন পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকটে বড়দের ঋণ কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নীতি সুদহার বাড়িয়ে বাজার থেকে টাকা তুলে নেওয়ার জরুরি। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি কমাতে ‘সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতি’ গ্রহণ এবং খরচ কমানো দরকার। এ মুহূর্তে প্রবৃদ্ধির চেয়ে সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীলতা বড় বিষয়।
এসআই/এসকেডি