ব্যাংক খোলা, উদ্বিগ্ন ব্যাংকাররা

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল চলাচলে সর্বাত্মক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। এ সময় প্রথমে ব্যাংক বন্ধ রাখার কথা বলা হলেও পরে ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিধিনিষেধ চলাকালেও সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে ব্যাংক। এমন সিদ্ধান্ত বদলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ব্যাংকাররা।
গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কিভাবে যাতায়াত করবেন তা নিয়েও দুশ্চিতায় আছেন ব্যাংক কর্মীরা। এছাড়া নতুন করে করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে সেবা দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন ব্যাংকাররা।
বেসরকারি এনসিসি ব্যাংকের কর্মী আসাদুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে অফিসে যাওয়া-আসা ও ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক সময় স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ পরিপালন করা কঠিন। সচেতনতার অভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয় না। স্বাস্থ্যঝুঁকি তো আছেই। এখন নতুন করে আরেক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। বিধিনিষেধে সব বন্ধ। রিকশায় ও হেঁটে অফিসে আসতে হয় ও বাসায় যেতে হয়। বাসা কেরানীগঞ্জ, আগে বাসে আসা-যাওয়ায় ৬০ টাকা লাগতো। গত সপ্তাহে বিধিনিষেধের সময় ২৮০ টাকা লেগেছে। আবার অনেকখানি পথ হাঁটতেও হয়েছে। মাঝে রাস্তায় রিকশার অপেক্ষা ও দুর্ভোগের শেষ নেই। এর মধ্যে আবার অফিস খোলা... কী যে হবে?
আব্দুল মান্নান নামে সরকারি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বিভাগে ২২ জনের মধ্যে জিএমসহ ৬ জন বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত। কয়েক জনের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। অফিস করাটা এখন সমস্যা হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংক বন্ধ রাখাটাই ভালো ছিল।
এদিকে বিধিনিষেধ চলাকালে ব্যাংক বন্ধ থাকবে না-কি খোলা থাকবে মঙ্গলবার দিনভর এমন আলাচনার মধ্যে রাতে ব্যাংক খোলা রাখার নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন (১৪ থেকে ২১ এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ব্যাংকের লেনদেন হবে। লেনদেন-পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষ করার জন্য ব্যাংক খোলা থাকবে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত। এ খবরে অনেক ব্যাংকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেন।
একজন লিখেছেন, ব্যাংকাররা কি উড়ে যাবে অফিসে? গতবছর লকডাউনে প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে অফিসে যাওয়ার পথে পুলিশি হয়রানির শিকার হন ব্যাংকাররা। এইবারেও ব্যতিক্রম কিছু নয়।
আবার আরেকজন লিখেছেন, লকডাউনে জরুরি সেবাদানকারী ব্যাংকারদের সম্মুখসারির করোনাযোদ্ধা হিসাবে মর্যাদা ও প্রণোদনা দেওয়াসহ নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করা উচিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জনসংযোগ সমিতির মহাসচিব ও মার্কেটিং অ্যান্ড ব্র্যান্ড কমিউনিকেশন ডিভিশনের প্রধান মো. মনিরুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার এ বিধিনিষেধের সময়ও জরুরি সেবার আওতায় ব্যাংক খোলা রাখা হয়েছে। তাই ব্যাংকারদের অফিস করতে হবে। এখন বিধিনিষেধ তদারকিতে যারা মাঠে থাকবেন, বিশেষ করে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তারাও বিষয়টা জানেন। গণপরিবহন বন্ধ, গতবার লকডাউনে আমরা দেখেছি অনেক ব্যাংকারকে অফিসে যাওয়া-আসার সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এবার যেন কোনো ব্যাংকারকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে না হয় এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারের বিধিনিষেধের নির্দেশনায় প্রথমে ব্যাংক বন্ধ রাখার কথা বলেছিল। ব্যাংক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পরে মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বিধিনিষেধের চলাকালে ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার কথা বলে। সেই আলোকে আমরা নতুন নির্দেশনা দিয়েছি। ‘ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন’ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে সার্কুলার জারি করেছে।
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ব্যাংকের লেনদেন হবে। লেনদেন-পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষ করার জন্য ব্যাংক খোলা থাকবে বিকেল আড়াইটা পর্যন্ত।
বিধি-নিষেধ চলাকালে ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়/প্রধান শাখাসহ সব অনুমোদিত ডিলার (এডি) শাখা ও জেলা সদরে অবস্থিত ব্যাংকের প্রধান শাখা খোলা রাখতে হবে। সিটি করপোরেশন এলাকাধীন প্রতি দুই কিলোমিটারের মধ্যে একটি শাখা (এডি শাখা না থাকলে) খোলা রাখতে হবে। তাছাড়া, এ সময়ে উপজেলা পর্যায়ে কার্যরত প্রতিটি ব্যাংকের একটি শাখা বৃহস্পতিবার, রোববার এবং মঙ্গলবার খোলা থাকবে। ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিজ নিজ অফিসে আনা-নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
এসআই/এনএফ