কর হারের গরমিলে করদাতাকে বেশি কর দিতে হয়
কর ব্যবস্থার হারের গরমিলের কারণে করদাতাকে অনেক সময় নির্ধারিত করের চেয়ে বেশি কর দিতে হচ্ছে বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।
রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা চেম্বারে আয়োজিত ‘বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির সামগ্রিক পর্যালোচনা (জুলাই-ডিসেম্বর, অর্থবছর ২০২৪)’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মসিউর রহমান বলেন, গত কয়েক দশকে আমাদের অর্থনীতিতে মৌলিক পরিবর্তন এসেছে, তার মধ্যে বেসরকারি খাতের সম্প্রসারণ অন্যতম। যেকোনো নীতির সফল বাস্তবায়ন হবে না, যদি না ব্যক্তিখাতের সমস্যা ও সম্ভাবনাকে মূল্যায়ন করে নীতি প্রণয়ন না হয়। সেই সঙ্গে বেসরকারি খাতকে সব সমস্যা সমাধানে সরকারের ওপর নির্ভর করার পরামর্শ দেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, কর ব্যবস্থাপনা নিয়ে পুরোনো কথাবার্তা এখনো চলছে, বিষয়টি নিয়ে আরও গভীরভাবে পর্যালোচনা প্রয়োজন। দেশের জাতীয় আয় ও রাজস্বের অনুপাত বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, কর ব্যবস্থার হারের গরমিলের কারণে করদাতাকে অনেক সময় নির্ধারিত করের চেয়ে বেশি কর প্রদান করতে হচ্ছে, যা কাম্য নয়। বিনিয়োগে স্থবিরতা কাটাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের কোনো বিকল্প নেই। তবে বিনিয়োগের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে প্রাপ্তিতে সরকারের এগিয়ে আসতে হবে।
ড. মসিউর রহমান বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে নীতির স্থিতিশীলতার কোনো বিকল্প নেই। রপ্তানি পণ্য ও বাজার সম্প্রসারণে কারো কোনো দ্বিমত নেই, তবে নতুন পণ্য ও নতুন বিনিয়োগ বিষয়ে নানামুখী চাপ রয়েছে। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে আমাদের আরও মনোযোগী হতে হবে।
আরও পড়ুন
সেমিনারে ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মূল প্রবন্ধে তিনি স্থানীয় অর্থনীতিতে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রভাব, এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ, জাতীয় বাজেট ও মুদ্রানীতির বাস্তবায়ন অবস্থা, মুদ্রাস্ফীতি, বেসরকারি বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, কৃষি, দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান, সিএমএসএমই, তথ্যপ্রযুক্তি এবং সেবা খাত নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন।
তিনি বলেন, জিডিপিতে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের অবদান কমে যাওয়াটা উদ্বেগের বিষয়। পাশাপাশি স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাস, সহনীয় মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি প্রাপ্তি, লজিস্টিক খাতের উন্নয়ন জরুরি। এছাড়াও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এর ফলে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ হ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বিষয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় আবশ্যক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমদানি-রপ্তানি ও রেমিট্যান্স মিলিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি হিসাব ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে সমন্বয় আনায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে। ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, ফলে এক্ষেত্রে স্বস্তি আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, মূল্যস্ফীতি না কমা পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমুখী নীতি অব্যাহত রাখবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে শিল্পখাতে খেলাপিঋণ ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটি রোডম্যাপ গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, কর ব্যবস্থাপনা ও কর আদায় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনয়ন অপরিহার্য। শিল্প খাতের প্রয়োজনের নিরিখে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে আমাদের শিক্ষা খাতের সংস্কার ও বিশেষ করে কারিগরি শিক্ষার ওপর আরও অধিক হারে গুরুত্ব দিতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য আমরা এখনো প্রস্তুত নই, যেটা উদ্বেগের বিষয়।
এছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
আরএম/এসএসএইচ