ব্র্যাক ব্যাংক এমডির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ব্ল্যাকমেইল করছেন বলে অভিযোগ করেছেন ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন। তার অভিযোগ, নিয়োগ, বদলি ও প্রমোশনের বিষয়ে চাপ দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে দেওয়া এমন বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে অবাঞ্ছিত করাসহ সেলিম আর এফ হোসেনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুক্তিযুদ্ধ সংসদে অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদ সভায় এমন দাবি জানান তারা। একইসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল এক প্রতিবাদ পাঠিয়েছে।
প্রতিবাদ সভায় কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বিদেশযাত্রায় আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি লাগলেও যা রহিতকরণের উদ্যোগ নেন এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এর পরপরই কয়েকজন দুর্নীতিগ্রস্ত এমডি বিদেশে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। দেশের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি গ্রহণ করেই বিদেশে যাওয়ার রীতি প্রচলিত আছে।
আরও পড়ুন
বক্তারা আরও অভিযোগ করেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্ধারিত সিনেমা বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল কর্মকর্তাকে দেখতে বাধ্য করায়, এর জন্য অর্থায়ন করা এবং যারা যারা সিনেমা দেখতে যাননি তাদের একটি বিশেষ সংস্থার মাধ্যমে তালিকা বানানোর মতো অনৈতিক কাজে তিনি যুক্ত ছিলেন। প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও নীতিমালা লঙ্ঘন করে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় বিপুল বেতন ভাতায় পতিত সরকারের আমলে ব্যাংকের এমডির চাকরি পান তিনি।
কর্মকর্তারা বলেন, আইডিএলসিতে থাকাকালে পিকে হালদার সংশ্লিষ্ট বেনামি প্রতিষ্ঠান ক্লিস্টোন গ্রুপের আবদুল আলীমকে কোটি টাকা ঋণ দেন তিনি। আর্থিক অনিয়মের কারণে তার আপন ভাই সিটি ব্যাংকের এমডির পদ ছাড়তে বাধ্য হন। পরে তারই প্রভাব ও প্রতিপত্তিতে তিনি আবার ব্যাংকিং খাতে ফিরে আসেন। নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ সব ব্যাংক ডাকাতের সঙ্গে বিশেষ সখ্যতাকারী এই প্রভাবশালী এখন সরকার পরিবর্তনের সুযোগে ভোল পাল্টাতে আরম্ভ করেছেন।
এর আগে বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিআইবিএমের এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের উপস্থিতিতে সেলিম আর এফ হোসেন অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ব্ল্যাকমেইল করছেন। তিনি নিয়োগ, বদলি ও প্রমোশনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের চাপের কথা উল্লেখ করেন ওই অনুষ্ঠানে।
এদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সভায় সেলিম আর এফ হোসেনের বিরুদ্ধে খুব দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ডেপুটি গভর্নর ও গভর্নরের কাছে অনুরোধ জানানো হবে মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তার বিরুদ্ধে দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলেও কর্মকর্তারা একমত হন।
বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন সেলিম আর এফ হোসেন
এদিকে বিআইবিএমের অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর এফ হোসেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘বিআইবিএমের টাস্কফোর্স অনুষ্ঠানে আমি ব্যাংকিং খাতে নাজুক অবস্থার জন্য আগস্ট পূর্ববর্তী সময়ের বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রিক ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা অভাবের কথা উল্লেখ করি। ব্যাংকিং খাত নিয়ে সরকারের কাছে জমা দেওয়া হোয়াইট পেপারেও জবাবদিহিতা ও সুশাসনের ঘাটতির কথা ওঠে এসেছে। গভর্নর স্যারও ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসনের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে বিভিন্ন ফোরামে কথা বলেছেন।
শীর্ষ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা, যারা বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নেই, পদের প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে চাকরি, পদোন্নতি ও বদলির জন্য সুপারিশ করতেন। তৎকালীন সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অতি অল্পসংখ্যক সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন।
বিগত সময়ে যারা দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে নানা অনিয়ম করেছেন, তারাই নানা তদবিরে জড়িত ছিলেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করত। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতেও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে, অনিয়মের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ৫ আগস্টের পর তাদের মধ্যে বেশিরভাগ লোকজনই ইতোমধ্যে চাকরিচ্যুত হয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে হাতেগোনা কয়েকজন কর্মকর্তা ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল কর্মকর্তাই অত্যন্ত সৎ, মেধাবী এবং চৌকস। দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে এবং ব্যাংকিং খাতকে সুশৃঙ্খল এবং নিয়মের মধ্যে পরিচালিত করতে তারা অত্যন্ত আন্তরিকতার সহিত কাজ করে যাচ্ছেন।
ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষ্ঠাবান ও মেধাবী কর্মকর্তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি বিশ্বাস করি, অভিজ্ঞ ও বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ গভর্নর আহসান এইচ মনসুর স্যারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল ও পেশাদার কর্মকর্তারা দেশের ব্যাংক সেক্টরকে শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করবেন।
কয়েকটি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার মন্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে ও অপব্যাখ্যা করে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। এ ধরনের ভুলভাবে উপস্থাপিত সংবাদের প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
আমি সবসময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সম্প্রতি সময়ে আমার দেওয়া বক্তব্যে কেউ মর্মাহত হয়ে থাকলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি কাউকে আহত বা কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো বক্তব্য প্রদান করিনি। শুধু অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো টাস্কফোর্স সেমিনারে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র।’
এসআই/এসএসএইচ