এমএফএস খাতের ১০ বছর
বিকাশ এখন ৫ কোটি ২০ লাখ গ্রাহকের পরিবার

বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর
এক দশকে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের আস্থা অর্জন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর। এ আস্থার কারণেই বিকাশ এখন পাঁচ কোটি ২০ লাখ গ্রাহকের পরিবার— মনে করেন তিনি।
কামাল কাদীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিকাশ শুরু থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের সব নীতিমালা পরিপূর্ণভাবে মেনে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সব শ্রেণির মানুষের আর্থিক লেনদেন আরও সহজ ও নিরাপদ এবং তাৎক্ষণিক ও সাশ্রয়ী করে তুলেছে। বৈচিত্র্যময় ও গুণগত মানের সেবার কারণে এখন টাকা পাঠানোর সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে ‘বিকাশ’।
তিনি আরও বলেন, বিকাশের সেবার মাধ্যমে কেবল গ্রাহক নয়; এজেন্ট, ডিস্ট্রিবিউটর, মার্চেন্টসহ কোটি মানুষের/পরিবারের জীবিকার ব্যবস্থাও হয়েছে। কেবল দেশেই নয়, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে অবদান রাখা প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বদরবারেও বাংলাদেশের সফলতার উদাহরণ তৈরি করেছে। করোনাকালে মানুষের জীবন সচল রাখতে বিকাশের ভূমিকাও ছিল অনন্য।
বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনে করেন, অর্থ স্থানান্তর, বিল নিষ্পত্তি/পরিশোধের ক্ষেত্রে মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করে লেনদেনের ব্যয় হ্রাসের মাধ্যমে বিকাশ অর্থনীতির নৈপুণ্য বাড়িয়েছে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে ব্যাংকের চেয়ে এমএফএস এগিয়ে গেছে, যার বেশির ভাগ অবদানই বিকাশের। ব্যাংকের তুলনায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও নারীদের মধ্যে এমএফএস অ্যাকাউন্ট থাকার হারও অনেক বেশি। বিকাশের এ সাফল্যের পেছনে মূলত চারটি বিষয় রয়েছে- বিনিয়োগের গুণগত মান, প্রযুক্তি, বিতরণ নেটওয়ার্ক ও কমপ্লায়েন্স।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বিকাশ ব্যবহারের ফলে পারিবারিক পর্যায়ে অকৃষি (নন-ফার্ম) আয় বেড়েছে ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। মাথাপিছু আয় বেড়েছে৫ দশমিক ৮ শতাংশ। বিকাশ ব্যবহারের সুবাদে মৎস্য চাষ থেকেও পারিবারিক আয় বেড়েছে। আয়ের পাশাপাশি ভোগের ক্ষেত্রেও বিকাশ ব্যবহারের প্রভাব রয়েছে।
যেসব খানা বা পরিবার বিকাশ ব্যবহার করে এবং যারা ব্যবহার করে না, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন অভিঘাতের সময় তাদের আয়, ব্যয় ও ভোগের ওপর প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়েছে গবেষণায়। দেখা গেছে, যেসব পরিবার অভিঘাতের সময় বিকাশ ব্যবহার করেনি, তাদের অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স কমেছে ৬১ শতাংশের বেশি। মাথাপিছু আয় কমেছে ১৭ শতাংশ। তবে মাথাপিছু ভোগে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি।
অন্যদিকে, যেসব পরিবার অভিঘাতের সময় বিকাশ ব্যবহার করেছে, তাদের অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স ৬০ শতাংশ বেড়েছে। পরিণতিতে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ২৮ শতাংশ। একই সঙ্গে মাথাপিছু ব্যয় বেড়েছে ৬ দশমিক ২ শতাংশ।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বিকাশের ব্যবহার বেড়ে যায়। বন্যার সময়ে ক্যাশ ইন ৩৩ শতাংশ এবং ক্যাশ আউট ৩০ শতাংশ বৃদ্ধির তথ্য পাওয়া যায়।
কোভিড দুর্যোগের সময় দেশের মানুষের কল্যাণে অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে ‘বেস্ট ই-ক্যাশ/মানি অ্যান্ড সিএসআর অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করে মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল কাদীর। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর একটি হোটেলে ‘গ্লোবাল বিজনেস সিএসআর অ্যাওয়ার্ড-২০২১’ অনুষ্ঠানে তাকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়।

বিকাশ আমেরিকার মানি ইন মোশন এলএলসি ও ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগ হিসাবে ২০১১ সালে শুরু হয়। ২০১৩ সালের এপ্রিলে বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের সদস্য, ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) বিকাশের ইক্যুইটি অংশীদার হয় এবং ২০১৪ সালের মার্চে বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের বিনিয়োগকারী হয়। ২০১৮ সালের এপ্রিলে চীনের আলিবাবা গ্রুপের অঙ্গসংস্থা আলিপে’র আর্থিক প্রতিষ্ঠান অ্যান্ট ফিন্যান্সিয়াল বিকাশের ইক্যুইটি অংশীদার হয়। বিকাশ ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের সাবসিডিয়ারি হিসেবে কাজ করে এবং অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করে।
ফরচুন ম্যাগাজিন ২০১৭ সালে তাদের ‘চেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড’ তালিকার শীর্ষ ৫০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিকাশকে ২৩তম স্থানে রাখে। ‘এশিয়ামানি’ পত্রিকাটি বিকাশকে ২০১৮ সালের সেরা ডিজিটাল ব্যাংক হিসাবে ঘোষণা করে। ওয়ার্ল্ড এইচআরডি কংগ্রেস এটিকে ২০১৭ সালে এশিয়ার সেরা কর্মী হিসেবে ঘোষণা করে। বিকাশকে সমস্ত ব্র্যান্ডের পাশাপাশি এমএফএস ব্র্যান্ডের বিভাগের মধ্যে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম ‘সেরা ব্র্যান্ড পুরস্কার ২০১৯’-এ ভূষিত করে।
এসআই/এসএসএইচ/এমএআর